ধৃতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আদালতে। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। সিপিএম থেকে কংগ্রেস হয়ে শেষে তৃণমূলে যোগদান। মুর্শিদাবাদের রানিনগরের লোচনপুরের বাসিন্দা সেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা আলতাফ আলির খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে। তার মধ্যে রয়েছেন পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্য এবং তাঁর ভাইও। ফলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরেই আলতাফকে খুন করা হয়েছে কি না সেই প্রশ্নও উঠছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, খুনের সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আলতাফের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে আজিমসরা এলাকায় জনা কয়েক দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে আলতাফকে ভর্তি করানো হয়েছিল লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু বুধবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই কাণ্ডে ইসলামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে আলতাফের পরিবার। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে রানিনগর ব্লকের লোচনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সাফিয়ার সেখকে। গ্রেফতার করা হয়েছে সাফিয়ারের ভাই ফিরোজ শেখ এবং জিএম শেখ নামে আরও এক স্থানীয় তৃণমূল কর্মীকে। তৃণমূল নেতা খুনে দলেরই কর্মীদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে গোষ্ঠীকোন্দলের তত্ত্ব।
২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন আলতাফ। পরে তিনি কংগ্রেস হয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। নিহত আলতাফ এবং অভিযুক্তদের মধ্যে কোনও পুরনো শত্রুতা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই আবহে নিহত আলতাফের ভাই নওশাদ শেখ অভিযোগ করেছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের অনাস্থা ভোটে দাদার নেতৃত্বে প্রধান নির্বাচিত হয়েছে। পরাজিতরা সেই আক্রোশে দাদাকে খুন করেছে।’’
এই পরিস্থিতিতে রানিনগরের তৃণমূল বিধায়ক সৌমিক হোসেন দাবি করেছেন, ‘‘আমিনুল ইসলাম বাপি নামে এক কংগ্রেসি দুষ্কৃতী এই খুনের মাস্টারমাইন্ড। আগে ও তৃণমূল করত। কিন্তু দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’’ সৌমিকের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাপি অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘আলতাফ মাস্টারকে মেরে দিয়ে বিধায়ক নিজের কার্যসিদ্ধি করতে চাইছে।’’ সৌমিক তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেছেন বাপি। প্রসঙ্গত, আলতাফ পেশায় ছিলেন শিক্ষক।
এই পরিস্থিতিতে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।’’