হতাশ তৃণমূলের জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান।
কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে জেলার চাকরিজীবীরা খুশি। আয়করে বিরাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাঙন নিয়ে বাজেটে টুঁ শব্দটিও না করায় হতাশ তৃণমূলের জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তোয়াব আলি বলছেন, “রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদাসীনতা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভাঙন রোধে চাপসৃষ্টি করতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ।” এলাকার বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুজিত দাস অবশ্য বলছেন, “সরাসরি ভাঙন রোধে টাকা বরাদ্দ হয়নি ঠিকই, কিন্তু জলসম্পদ মন্ত্রকের দফতরকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ভাঙন রোধের ব্যয় করা যেতে পারে। তবে ভাঙনের ভাগ্যে শিকে না ছিঁড়লেও পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া আটকানোর লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নে নজর দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।’’
সামগ্রিক ভাবে আয়কর নিয়ে বাজেট নিয়ে খুশি মুর্শিদাবাদের আম জনতা। কিন্তু মুর্শিদাবাদ মূলত কৃষিজীবী এলাকা। সেই সঙ্গে ভাঙন সমস্যা রীতিমতো গুরুতর হয়ে উঠেছে জেলায়। সেই সঙ্গে বিড়ি শিল্প নিয়েও নানা সমস্যা রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদেরও প্রাধান্য রয়েছে এই জেলায়। বিভিন্ন মহলের দাবি, তিনটি ক্ষেত্রের কোনওটিই প্রাধান্য পায়নি এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে।
শনিবার বাজেট অধিবেশন শেষ হতেই দিল্লি থেকে ফোন প্রতিক্রিয়া দেন জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, “আমি হতাশ এই বাজেটে। কারণ মুর্শিদাবাদের মূল সমস্যা ভাঙন। ভাঙন রোধের কোনও উল্লেখ নেই। বিড়ি শিল্প বা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে কানাকড়িও বরাদ্দ হয়নি এ বারের বাজেটে। যে ভাবে ভাঙন প্রসঙ্গ লোকসভায় তোলা হয়েছে বারংবার তাতে আশা ছিল এ বারে শমসেরগঞ্জের ভাঙন রোধে কয়েকশো কোটি টাকা রাখা হবে। কারণ রাজ্য সরকারের পক্ষে এই ভাঙন রোধ সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার। এত আর্থিক সমস্যার মধ্যেও এ বারে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এত বড় ভাঙন রোধের ক্ষেত্রে এই অর্থ সামান্য। তাই ভরসা ছিল কেন্দ্রীয় বাজেটের উপরে। বিড়ি শিল্পে জঙ্গিপুরে জড়িত প্রায় ৭ লক্ষ কর্মী। বেশির ভাগই মহিলা। আশা ছিল তাঁদের জন্য কোনও বিকল্প রুজির সংস্থান তৈরির চেষ্টা হবে। তাও হয়নি। আমরা হতাশ।”
সিপিএমের শমসেরগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক তোয়াব আলি বলেন, “রাজ্য সরকার ভাঙন রোধে যা দেন তাতে ওই বালির বস্তাই ফেলা সম্ভব। তা দিয়ে গঙ্গার ভাঙন রোখা যায় না। তাও তার অনেকটাই চুরি হয়ে যায় শাসক দলের নেতাদের পকেটে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার হাত ধুয়ে ফেললে মানুষ যাবে কোথায়?’’
তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন তৈরি করতে পারেনি। সর্বদলীয় চাপ সৃষ্টির পরিস্থিতিও রাজ্য তৈরি করতে পারেনি। তাই বাজেটে বাংলা উপেক্ষিত।”
তবে সরকারি ও বেসরকারি নানা ক্ষেত্রে চাকরিজীবীরা খুশি। তাঁদের বক্তব্য, এই বাজেটের ফলে এক দিকে যেমন মধ্যবিত্ত করের হাত থেকে রেহাই পাবে, তেমনই নতুন কর্মসংস্থানও হতে পারে।
বেলডাঙা এসআরএফ কলেজের অধ্যক্ষ সুহাস রায় বলেন, ‘‘কর মুক্ত টাকায় কেনাকাটায় জোর আসবে। এতে উৎপাদন বাড়তে পারে। তাতে সামগ্রিক লাভ দেখা যাবে।"