স্টলে উৎসুক দর্শক। নিজস্ব চিত্র
জেলায় শিশুশ্রমিক এত বেশি কেন, সেই প্রশ্ন তুললেন শাসকদলেরই এক বিধায়ক। রঘুনাথগঞ্জে শ্রমিক মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছেন রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আখরুজ্জামান। মঞ্চে তখন শ্রমমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন শ্রম দফতরের একাধিক আধিকারিক। বিধায়ক শ্রম দফতরের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার যা চায় তা বাস্তবায়িত করা হচ্ছে না।
রঘুনাথগঞ্জের ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়ামে গত রবিবার শুরু হয়েছে জঙ্গিপুর মহকুমা শ্রমিক মেলা। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আখরুজ্জামান বলেন, “জঙ্গিপুর মহকুমায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র এই মহকুমাতেই অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা ১৪ লক্ষ। এঁদের মধ্যে বিড়ি শ্রমিকই রয়েছেন সাত লক্ষ। অথচ এ পর্যন্ত শ্রম দফতর মাত্র তিন লক্ষ ৩৫ হাজার ৮১০ জন শ্রমিককে সামাজিক সুরক্ষা যোজনার অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছেন। রাজ্য সরকার চায়, শ্রমিকদের কাছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে। কিন্তু তা সঠিকভাবে রূপায়ণ করা হচ্ছে না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘ব্লকে ব্লকে শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হয় না। কর্মসূচি অনেক নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। এই দায়িত্ব শ্রম দফতরের। কিন্তু তারা তা করছে না।” সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার অভিযোগ, ‘‘জেলার সমস্ত ইটভাটা, ছোট ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র শিল্পের শ্রমিকদেরও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প এখনও আনা যায়নি। এঁদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।’’
মুর্শিদাবাদ জেলায় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নথিভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ১১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮৮০ জন। অথচ, এই জেলায় ২০ লক্ষেরও বেশি অসংগঠিত শ্রমিক রয়েছেন। জেলায় এই কাজ যে আশানুরূপ ভাবে এগোয়নি, তা মানছেন শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘাটতি পূরণের দায়িত্ব নিতে হবে শ্রম দফতরকেই। এ জন্য আরও প্রচার দরকার। শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে শ্রম দফতরের কর্মীদের। কর্মী কম, এমনকথা বলে দায় এড়ালে চলবে না।’’ রাজ্যের শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতারও মেনে নিয়েছেন, জেলায় আরও বেশি শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত হওয়া উচিত ছিল। বিড়ি শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা দূর হওয়া দরকার বলে তাঁর মত।
সিটু’র জেলা সভাপতি জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে শ্রমিক মেলা করলেই দলে দলে শ্রমিকরা মেলায় চলে আসবেন না। বিভিন্ন গ্রামে শিবির করে শ্রমিক সংগঠনের সাহায্য নিয়ে তাঁদের আনতে হবে। তা হচ্ছে না।’’