—প্রতীকী চিত্র।
গত বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়া কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র প্রসঙ্গে বিরক্তি প্রকাশ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে নিদান দিয়েছেন, তাতে ঘুম উড়ে গিয়েছে তৃণমূলের অনেক নেতারই। কারণ সেই নির্দেশ মানতে গেলে ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’ হয়ে যাবে কিনা, সেটাই দলের অন্দরে প্রধান জল্পনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ মানতে হলে বেশির ভাগ পদাধিকারীকেই পদ হারাতে হতে পারে।
গত শনিবারের ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে অভিষেক বলেছেন, যে সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি বুথে তৃণমূল হেরেছে এবং যে সমস্ত বুথে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোট থেকে ধারাবাহিক ভাবে দল হারছে, সেই সমস্ত বুথের সভাপতি পরিবর্তন করতে হবে। নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগর এবং তার লাগোয়া গ্রামাঞ্চল কৃষ্ণনগর ১ উত্তর সাংগঠনিক ব্লক তৃণমূলের নেতারা এ হেন নিদানে আতঙ্কিত যদিও তা তাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন না।
অভিষেক বলেন, “কৃষ্ণনগর উত্তরে ২৭১টি বুথের মধ্যে ২৩৩টি বুথে আমরা ৫০টির বেশি ভোটে আমরা হেরেছি। আমি অনুরোধ করব, যে সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি ভোটে আমরা হেরেছি, একদম বুথ সভাপতি-সহ সবাইকে পরিবর্তন করতে। যে সমস্ত বুথে আমরা ধারাবাহিক ভাবে ২০২১ সাল থেকে হেরেছি, পুরসভা বা পঞ্চায়েতে হেরেছি, লোকসভায় হেরেছি, একদম চিহ্নিত করে— বুথ এবং তারপর ১০-১২টা অঞ্চল আছে— অঞ্চল সভাপতিও পরিবর্তন করবেন। সুপারিশ তৈরি করে রাখবেন আমরা আনিয়ে নেব।”
তৃণমূলের প্রভাবের নিরিখে উত্তর নদিয়ার একমাত্র ব্যতিক্রমী কেন্দ্র এই কৃষ্ণনগর উত্তর। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী মুকুল রায়। কৃষ্ণনগর পুর এলাকা থেকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০২৩ সালে তৃণমূল পুরসভা দখল করলেও ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ন’টিতে তাদের ভরাডুবি হয়।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র প্রায় ৫৬ হাজার ভোটে জয়ী হন, কিন্তু কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে তিনি প্রায় ৫৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। কৃষ্ণনগর পুর এলাকায় তিনি পিছিয়ে ছিলেন প্রায় ৩১ হাজার ভোটে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৪ হাজার ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। কৃষ্ণনগর পুর এলাকায় ‘লিড’ ছিল প্রায় ২৯ হাজার ভোটের। ২০২৪ সালেও কৃষ্ণনগর শহরে এক মাত্র ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ডে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। বেশির ভাগ বুথেই তাদের ভরাডুবি হয়।
এর উপর কৃষ্ণনগর পুরসভাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিদের লাগাতার কোন্দলও জনমানসে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যদিও তৃণমূলের কৃষ্ণনগর শহর সভাপতি তথা পুরপ্রধানের বিরোধী গোষ্ঠীর পুরপ্রতিনিধি প্রদীপ দত্ত ওরফে মলয় সোমবার বলেন, “আমরা আগে থেকেই বুথ ধরে-ধরে নেতৃত্বের পর্যালোচনা করতে শুরু করেছি। আর আমাদের লড়াইটা হল, পুরসভার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফিরিয়ে এনে মানুষের আস্থা আর্জন করা।” আবার পুরপ্রধান রিতা দাসের দাবি, “আমরা মানুষের বিশ্বাস আর আস্থা অর্জন করেই পুরসভা পরিচালনা করছি, তাই এ বার মানুষ তৃণমূলের সঙ্গেই থাকবে।”
কৃষ্ণনগর পুর এলাকায় তৃণমূলের অবস্থা তো ধারাবাহিক ভাবেই খারাপ। সেই সঙ্গে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের অন্তর্গত পোড়াগাছা, আসাননগর, ভীমপুর, দোগাছি, ভান্ডারখোলা ও ভাতজাংলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও তাদের অবস্থা সঙ্গীন। এক মাত্র ভাতজাংলা গ্রাম পঞ্চায়েতটি তৃণমূল কোনও মতে দখল করতে পেরেছে। কৃষ্ণনগর ১ উত্তর সাংগঠনিক ব্লক দেবব্রত ঘোষ বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পালন করার জন্য জেলা নেতৃত্ব যে ভাবে বলবে সেই ভাবেই পদক্ষেপ করা হবে।”
তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমানও বলেন, “দলের সেনাপতি যে ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই মতোই সংগঠন সাজানো হবে। পদে থাকলে কাজ করতেই হবে।”