Open Defecation

লাঠি হাতে শৌচকর্ম রুখছেন প্রৌঢ়া

নতুন বাসস্ট্যান্ডের পিছনের প্রায় একশো মিটার ফাঁকা রাস্তায় লাঠি হাতে প্রতি দিন তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২০ ০০:৩১
Share:

পাহারাদার অনিতা। নিজস্ব চিত্র

নদিয়ার করিমপুর রামকৃষ্ণপল্লি ঢোকার ওই রাস্তায় প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ করা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাজারের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক শৌচালয় রয়েছে। রাস্তার পাশেই নতুন বাসস্ট্যান্ডেও সুলভ শৌচালয় রয়েছে। তার পরেও কিছু মানুষ শৌচকর্ম সারতে রাস্তায় চলে যেতেন। কিন্তু এখন সে কাজ করতে গেলেই লাঠি হাতে তেড়ে আসেন এলাকার ঊনষাট বছরের অনিতা গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

নতুন বাসস্ট্যান্ডের পিছনের প্রায় একশো মিটার ফাঁকা রাস্তায় লাঠি হাতে প্রতি দিন তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে এ ভাবে প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ রুখতে গত কয়েক মাস ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পাহারা দেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই পাড়ায় অনেক পরিবার বাস করে। পাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে খুদে পড়ুয়ারা এবং পাড়ার অন্য ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। এই পথে প্রতি দিন মহিলা, শিশু সহ প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। অথচ, সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথচলতি মানুষ রাস্তায় শৌচকর্ম করে। শেষ পর্যন্ত রাস্তা শৌচমুক্ত রাখতে পথে নেমেছেন প্রৌঢ়া অনিতা। পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা অনিতা এ দিন বলেন, “বহু দিন আগে থেকে এই পথে মানুষ মূত্রত্যাগ করে চলেছে। বারবার সকলকে নিষেধ করলেও কোনও কাজ হয়নি। রাস্তায় চলতে গিয়ে মেয়েদের লজ্জায় পড়তে হয়। আমার সামনেও বহু বার এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই মানুষদের সচেতন করতে এ ভাবে পথে নেমেছি।”

Advertisement

অনিতার মেয়ে মিঠু দাস বৈরাগ্য জানান, তাঁর মা এখন প্রতি দিন সকালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করে সোজা এই রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। দুপুরে স্নানের জন্য এক বার বাড়িতে যান। তা ছাড়া, বাকি সারা দিনই তিনি লাঠি হাতে নিয়ে এই রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাঁটাচলা করেন। সাধারণ মানুষকে রাস্তায় শৌচকর্ম করতে দেখলেই এই কাজ না করার জন্য বোঝান। আবার, কখনও কখনও লাঠি নিয়ে তেড়েও যান। এই নিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে মাঝে মাঝে তিনি বিবাদেও জড়িয়েছেন বলে জানা গেল। তবে তিনি সমর্থন পেয়েছেন এলাকার মানুষের। রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা ও পেশায় স্কুলশিক্ষক প্রিয়তোষ সরকারের কথায়, ‘‘নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরি হওয়ার পর বাইরের বহু মানুষ এখানে আসছেন। কাছাকাছি কোথায় শৌচালয় রয়েছে, তাঁদের অনেকেই জানেন না। তাঁরা ওই রাস্তাকেই বেছে নেন। সবাইকে সচেতন করতে ওখানে ওই মহিলাকে পাহারা দিতে হয়। এর পরে নিশ্চয়ই মানুষ ওখানে অপকর্ম বন্ধ করবেন।’’

নির্মল জেলায় এখনও বহু জায়গায় কিছু মানুষ এ ভাবে প্রকাশ্যে শৌচকর্ম করে। তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রশাসন সুলভ শৌচালয়ের ব্যবস্থা করে দিলেও তা সব সময়ে পথচলতি মানুষকে ব্যবহার করানো সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ওই প্রৌঢ়া যে ভাবে যে ভাবে দিনরাত রাস্তায় থেকে লড়ছেন, তা প্রশংসাযোগ্য বলে মনে করছেন করিমপুরের পরিবেশকর্মীরা।

করিমপুর ১ ব্লকের বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই মহিলার রাস্তা পাহারা দেওয়ার কথা আমি শুনেছি। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সাধারণ মানুষকে উনি যে ভাবে সচেতন করছেন, সে ভাবে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement