ধ্রুবপুত্র নাটকের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
জিরেন কাঠ আছে, নলেন গুড় আছে। আছে বইমেলা, পিকনিক। আর আছে নাটক। গাঁ-গঞ্জ থেকে মফস্সল, শহর সমস্বরে জানিয়ে দিচ্ছে, ‘‘সকালের মিঠে রোদ্দুরে ভাল থাকে শরীর। আর সন্ধ্যার পরে নাটকের ওমে ভাল থাকে মন।’’
কল্যাণী, রানাঘাট, চাকদহ, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, করিমপুরে শুরু হয়ে গিয়েছে নাট্যোৎসবের প্রস্তুতি। মুর্শিদাবাদে তো ফি বছর শীত পড়ার আগেই শীত পড়ে যায়। নভেম্বর থেকেই কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বাংলাদেশ, জার্মানি ও ব্রাজিলের মতো দেশ থেকে নাটক নিয়ে বহরমপুরে হাজির হয়ে যায় খ্যাতনামা নাট্যদল। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহরমপুর, রঘুনাথগঞ্জ, ফরাক্কা, কান্দি, জিয়াগঞ্জ, লালগোলা এমনকী বীরভূম লাগোয়া পাঁচথুপির মতো প্রত্যন্ত গ্রামেও চলে নাট্যোৎসব। ওই সময় সারা জেলা মিলিয়ে প্রায় ২৫টি নাট্যোৎসবে অন্তত ২৫০টি নাটক মঞ্চস্থ হয়।
নদিয়ায় ১৭ ডিসেম্বর থেকে নাট্যোৎসবের আয়োজন করছে কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র। কৃষ্ণনগর নাটকের হাত ধরেই ইংরেজি নতুন বছরে পা রাখবে। চলতি বছরের শেষ দিন শুরু হচ্ছে ‘পরম্পরার’ আয়োজনে চতুর্দশ নাটকের মেলা। চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরম্পরার তরফে শিবনাথ ভদ্র জানান, চতুর্দশ নাটকের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে নটী বিনোদিনীর নামে। প্রস্তুতি তুঙ্গে রানাঘাটেও। সেটা ছিল ২০০৩ সাল। রানাঘাটে উদ্বোধন হল নজরুল মঞ্চের। পাঁচ মাসের মাথায় ওই মঞ্চে ‘রানাঘাট নাট্যপ্রেমী সংস্থার’ উদ্যোগে শুরু হল শীতকালীন নাটকের উৎসব। এ বারে উৎসবের ১৫তম বর্ষ। রানাঘাট পুরসভা এবং ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় এ বার উৎসব শুরু হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। চার দিনে পাঁচটি নাটক।
নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় পর্ব চলবে ৩ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মঞ্চস্থ হবে পাঁচটি নাটক। রানাঘাট সম্প্রীতি নাট্য আন্দোলনের সম্পাদক নৌসাদ আলি জানান, নিজের শহরে বসে নিয়মিত নাটক দেখার সুযোগ হাত ছাড়া করতে রাজী নয় রানাঘাট। এ বার নবদ্বীপের নাট্য সম্মেলনের ৪২তম বর্ষ। চার দিনের উৎসবে থাকছে প্রায় এক ডজন নাটক। করিমপুরেও কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে একাধিক নাট্যোৎসব। বিখ্যাত নাট্যদলের নাটক দেখতে দর্শকের ভিড় স্বাভাবিক। কিন্তু অনামী নাট্যদলের প্রযোজনাতেও দশর্কের ভিড় নেহাত মন্দ নয়।
বৃহস্পতিবার রঘুানাথগঞ্জের রবীন্দ্রভবনে শুরু হয়েছে নাট্যম বলাকার ৭ দিনের নাট্যোৎসব। মঞ্চস্থ হবে ১৪টি নাটক। নাট্যসংস্থার কর্ণধার তরুণ চৌবে বলেন, ‘‘এই শহরেও প্রতিদিন টিকিট কাটা দর্শকের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৫৫০ জন।’’ বহরমপুর শহর-সহ সারা জেলায় একসময়ের ‘হাউস ফুল’ হওয়া সিনেমা হলগুলোর বেশ কয়েকটি দর্শকের অভাবে তালাবন্দি। কোনওটা এখন শপিং মল। তা হলে কোন যাদুতে আজও নাটকের এত দর্শক? ঋত্বিক-এর দেশ বিদেশের ১৭তম বছরের নাট্যমেলায় সোমবার অভিনীত হয় রঙ্গপট-এর নাটক ‘ধর্মাশোক’। অভিনয় শেষে দেবশঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘বহরমপুরে নাটকের এত দর্শক, এত ভাল দর্শক দেখে আমি আপ্লুত!’’ বহরমপুরের ছান্দিক নাট্যংস্থার কর্ণধার শক্তিনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নাটক নেহাতই বিনোদন নয়। নাটকের মঞ্চে ব্যক্তি মানুষ নিজেকে দেখতে পায়। জীবনের নিত্যনতুন জটিলতা দু’ হাত দূর থেকে প্রত্যক্ষ করে দর্শক আর কুশীলব একাকার হয়ে যায়।’’