হাতের লেখা ছিল বঙ্গলিপিতে

গরমের লম্বা ছুটির পর স্কুল খুলেছে। বকুলতলা ফিডার স্কুলের ক্লাস ফোরের প্রথম পিরিয়ড ‘ছোট কেষ্টবাবুর’। নামডাকার খাতাটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে দিয়ে গোটা ক্লাসের উপর চোখ বোলাতে বোলাতে মাস্টারমশাইয়ের নির্দেশ, ‘প্রত্যেকে টেবিলে হাতের লেখার খাতা জমা কর’।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ০২:২৩
Share:

গরমের লম্বা ছুটির পর স্কুল খুলেছে। বকুলতলা ফিডার স্কুলের ক্লাস ফোরের প্রথম পিরিয়ড ‘ছোট কেষ্টবাবুর’। নামডাকার খাতাটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে দিয়ে গোটা ক্লাসের উপর চোখ বোলাতে বোলাতে মাস্টারমশাইয়ের নির্দেশ, ‘প্রত্যেকে টেবিলে হাতের লেখার খাতা জমা কর’। শুনেই গুটি গুটি পায়ে বেশির ভাগ খাতা পৌঁছে গেল টেবিলে। পিছনের বেঞ্চে মৃদু গুনগুন। সেই দিকে তাকিয়ে কেষ্টবাবুর প্রশ্নবাচক হুঙ্কার ‘ইউ... বয়েজ?’ কথাটা শেষ হওয়ার আগেই জনা ছয়েক ছেলে সটান দাঁড়িয়ে পড়ল বেঞ্চের উপর।

Advertisement

ছোট কেষ্টবাবুর হাতেগড়া ছাত্র মধ্যসত্তরের জীবনকানাই সাহার কথায়, “আমাদের সময় গরমের ছুটিতে বাড়ির কাজ মানেই তিরিশ পাতা করে বাংলা আর ইংরাজি হাতের লেখা। মাষ্টারমশাইরা ছিলেন ভীষণ খুঁতখুঁতে।”

এ সব কথা এখনও বিলক্ষণ মনে আছে সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের ‘ধীরেন স্যারের’ ছাত্রদের। ধীরেন্দ্রনাথ মণ্ডলের প্যাশন ছিল ভাল হাতের লেখা। লিখতেন মুক্তাক্ষরে। ছাত্রদের হাতের লেখার প্রতি তাঁর যত্ন ছিল অন্য রকম। গেরুয়া লুঙ্গি, সাদা ফতুয়া। হাতে থাকত নানা মাপের বেতের একটা গোছা। বলাবাহুল্য সে সবের যথাবিধি ব্যবহার হতো ছাত্রদের উপর। “হাতের লেখার জন্য মানুষ কতটা কঠোর হতে পারে তা ভাবা যাবে না,” বললেন সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী সাগরপাড়ার বাসিন্দা প্রদীপ বিশ্বাস।

Advertisement

মাসখানেকের গরমের ছুটি। লম্বাটে ‘বঙ্গলিপি’ খাতা ভরে উঠত আঁকাবাঁকা হাতের লেখাতে। হাতে অনেক সময় আছে ভাবতে ভাবতেই ঘনিয়ে আসত দিন। এরই মধ্যে ক্লাসের ফার্স্ট হওয়া বন্ধুটি এক দিন নিরীহ মুখ করে মাকে বলে গিয়েছে তার বাড়ির কাজ নাকি কবেই সারা হয়ে গিয়েছে। ব্যাস, গরমের দুপুরগুলো জেলখানা।

হাতের লেখার জন্য আলাদা ক্লাস থাকত। আদর্শলিপি থেকে মাষ্টারমশাই রুলটানা খাতায় প্রথম লাইন লিখে দিতেন ‘আলস্য দোষের আকর’ কিম্বা ‘সদা সত্য কথা বলিবে’। পাতা ভর্তি করে লিখতে হতো।

সেই নিব পেন, দোয়াত আর কালির ট্যাবলেটের সঙ্গে গরমের ছুটির হাতের লেখার চর্চার রেওয়াজটাই হারিয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement