কল্যাণীর সগুনা পঞ্চায়েতে রঘুনাথপুরে উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের জমিতে অস্থায়ী নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি জমি জবরদখল করে গড়ে উঠেছিল অস্থায়ী নির্মাণ। বছর দেড়েক আগে কল্যাণী মহকুমা ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা ভেঙে দেওয়াও হয়। সগুনা পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুরে সেই একই জমিতে মাস কয়েক ধরে সেই বাসিন্দারাই আবার অস্থায়ী নির্মাণ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ। অথচ প্রশাসনকে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না।
কল্যাণী ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গয়েশপুর চেকপোস্ট এলাকায় সগুনা পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুরের কল্যাণী-এমসের রাস্তার ধারে ওই জমি উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের। সেখানে বেশ কিছু গাছপালাও রয়েছে। তার মাঝে-মাঝে বেশ কয়েকটি টিনের ঘর উঠেছে। কোনও কোনও টিনের ঘরের জমিতে বাঁশে, আবার কোনও ঘরের জমিতে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা রয়েছে। কোথাও ইঁটের গাঁথনিও এক সময় শুরু হয়েছিল, তাও দেখা গিয়েছে। সেখানে অল্প ইঁট জমা হয়ে পড়ে রয়েছে। পর পর দু'দিন বেলা ১১টা নাগাদ ওই এলাকায় গিয়ে অধিকাংশ টিনের ঘরেই তালা দেখতে পাওয়া যায়। বাসিন্দাদের কারও দেখা মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ এলাকারই কিছু পরিচিত ব্যক্তির নামে অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের নিজস্ব জমিজমা, ঘরবাড়ি থাকার সত্ত্বেও বাইরে থেকে আত্মীয়স্বজন এনে তাঁরা ওই জমি দখল করতে চাইছেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সম্প্রতি এক দিন জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে আধিকারিক আসেন পরিদর্শনের জন্য। সে দিন ওই ঘরগুলোতে লোক ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের কারও কারও দাবি, উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি এলাকা থেকেও কোনও কোনও দিন লোকজন এসে থাকছে। রাত হলে আবার তারা চলে যাচ্ছে।
জেলার যে আধিকারিকেরা পরিদর্শনে এসেছিলেন তাঁদের এক জন প্রথমে বলেন, “ওখানে একটা কলোনির করার জন্য মৌখিক প্রস্তাব এসেছিল। সেই জন্য দেখতে গিয়েছিলাম।” পরে অবশ্য তিনি বলেন, “কিছু লোক বসে আছে, ওরা ওখানে থাকে না। দু’চারটে পরিবারকে দেখে মনে হল অনেক পুরনো। মনে হল, জায়গাটা দখল হচ্ছে।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই জমির একটা অংশে সগুনা পঞ্চায়েতের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ছিল। তাতে পরিবেশ দূষণ হতে পারে এই আশঙ্কায় হাই কোর্টে মামলা করা হয়। হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, বিজ্ঞান সম্মতভাবে ওখানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। তার দেখভাল করবে পঞ্চায়েত। তারা না দেখলে বিডিও দেখবেন। আর যাঁরা অস্থায়ী নির্মাণ করেছিলেন, গত বার নির্মাণ ভাঙার পরে তাঁরাই পাট্টার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাঁরা পাট্টা পাননি। পরে এ রকম ৪০টি পরিবার ওখানে দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর বসবাস করছে এবং পাট্টা পাচ্ছে না বলে দাবি করে হাই কোর্টে মামলা করে। প্রায় দেড়মাস আগে হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, তদন্ত করে পাট্টা পাওয়ার উপযুক্ত হলে তা দিতে, অন্যথায় আবেদন নাকচ করে দিতে। তিন মাসের মধ্যেই তা করতে হবে।”
কল্যাণীর বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা শুনেছি, ওখানে রাতারাতি বেশ কিছু ঘর নতুন করে গজিয়ে উঠেছে। নোটিস দিয়ে তাঁদের সরে যেতে বলব। না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর কল্যাণী মহকুমাশাসক হীরক মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি শুনলাম। দেখছি।”