খুদেদের দিয়ে গাছে জল দেওয়া চলছে নিয়মিত। —নিজস্ব চিত্র।
কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুলের ক্লাস সিক্সের দুই ছাত্রের গন্ডগোলে জামা ছিঁড়ল এক জনের।
ডাক পড়ল প্রধান শিক্ষকের ঘরে।
প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস বললেন, ‘‘বন্ধুর জামা ছিঁড়ে যে অপরাধ তুমি করেছ, তার শাস্তি তোমায় পেতেই হবে। কাল স্কুলে দু’টো ফুলগাছের চারা টবে লাগিয়ে নিয়ে আসবে। ছুটির পর রোজ সে দু’টোয় জল দেবে। এটাই তোমার শাস্তি। তার পর গাছে ফুল ফুটলে তবেই শাস্তি শেষ।’’
এ আবার কেমন শাস্তি? কানমলা নেই, ধমক নেই, নিদেনপক্ষে নিলডাউন— তা-ও না। ভারী মজার শাস্তি তো! ছেলেটি খুব খুশি। পরের দিন একটা টগর আর একটা গন্ধরাজের চারা নিয়ে স্কুলে হাজির ছোট্ট ছেলেটা। শাস্তি শুরু হল সে দিন থেকেই।
‘‘আর এক জনকেও স্কুলের দরজা ভাঙার অপরাধে গাছ লাগানোর শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’’— বলেন মনোরঞ্জনবাবু। তিনি আরও বলেন, ‘‘ধ্বংস যে করে, গাছ লাগানোর মধ্যে দিয়ে তাকে সৃষ্টির বার্তা দেওয়া আর একই সঙ্গে প্রকৃতিকে ভালবাসতে শেখানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’’
শুধু মনোরঞ্জনবাবু একা নন, কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘কোনও ছাত্র স্কুলের গাছের ফুল ছিঁড়লে আমরাও তাকে বাড়ি থেকে গাছ নিয়ে এসে গাছে ফুল ফোটানোর শাস্তি দিই। আর গন্ডগোলের শাস্তি অনেক সময়েই হয় স্কুল পরিষ্কার করা, নোংরা তুলে ডাস্টবিনে ফেলা বা চেয়ার-টেবিল গুছিয়ে রাখা।’’
তবে, অপরাধ খুব গুরুতর হলে বা এ সবের কোনও কিছুতেই কাজ না হলে তখন বকুনিও পড়ে। আর সব শেষে রয়েছে গার্জেন কল।
শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্কুলে শাস্তি দেওয়ার ধরন পাল্টে যাচ্ছে দিনে দিনে। আগের মতো গুরুমশাই বেত নিয়ে ক্লাসে ঢুকে চড়াম-চড়াম করে পিঠে বা হাতে মেরে চাকা দাগ করে দেবেন, এ সব এখন স্বপ্নের অতীত। শিক্ষকদের উপরে কড়া নির্দেশ— শাসন নয়, ভালবাসায় জয় করতে হবে ছাত্রছাত্রীর মন। তাই বেতের প্রসঙ্গ তুলতেই উৎপলবাবু বলেন, ‘‘এখন আর বেতের ব্যবহার কোথায়? সে সব তো আলমারিতেই শোভা পাচ্ছে।’’
চাপড়ায় পদ্মমালা পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দেবাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় আবার ছোট্ট ছোট্ট পড়ুয়াদের দুষ্টুমির শাস্তি হিসাবে কখনও সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে সিঁড়ি গোনার কাজ দেন। কখনও দেন পিছনের সারির বাচ্চাদের অ-আ-ক-খ পড়ানোর কাজ।
দেবাঞ্জলি বলেন, ‘‘স্কুলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই এদের নালিশ শুরু হয়। খুব ছোট তো এরা, এদের নালিশও তাই খুব ছোট ছোট। যেমন এ ওর মাথা ঠুকে দিয়েছে। সে তার জামা ধরে টেনেছে বা সিঁড়িতে নামতে গিয়ে ধাক্কা মেরেছে— এমন হাজারও নালিশ।’’ তবে শাস্তির এই নতুন পদ্ধতিতে বেশ ফল মিলছে, জানাচ্ছেন তিনি।
দেবাঞ্জলি বলেন, ‘‘অনেক সময়ে শাস্তি হিসাবে খাতায় কাগজ কেটে কোলাজ করারও কাজ দিই। বাচ্চারা বেশ মজা পায় তাতে। আর এর কোনও কিছুতেই যখন কাজ হয় না, তখন সেই পুরনো পথে পাটকাঠি হাতে ধমকাতেই হয় শেষ পর্যন্ত।’’
অনেক শিক্ষক আবার দুষ্টু পড়ুয়াদের শান্ত করার উদ্দেশ্যে স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দুষ্টুদেরই হাতে দেয়। তাতে ভাল ফল মেলে বলেই জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা।
কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে আর দুষ্টুমির সময় মেলে না। স্কুলের পরিবেশও শান্ত থাকে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।