লক্ষ্য এ বার পুরসভা, বোল তুললেন জাকির

কংগ্রেসের খাসতালুক দখলের দায় বর্তেছিল তাঁর উপরে। তিনি যে সফল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই দায়। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের এক নেতাই ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘কংগ্রেসের চোখ রাঙানিতে এ জেলায় বামেরাই থরহরিকম্প ছিল, সেখানে তৃণমূল চার-চারটি আসন পাওয়ার পরেও প্রশ্নটা করছেন!’’

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:৩২
Share:

কংগ্রেসের খাসতালুক দখলের দায় বর্তেছিল তাঁর উপরে।

Advertisement

তিনি যে সফল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই দায়। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের এক নেতাই ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘কংগ্রেসের চোখ রাঙানিতে এ জেলায় বামেরাই থরহরিকম্প ছিল, সেখানে তৃণমূল চার-চারটি আসন পাওয়ার পরেও প্রশ্নটা করছেন!’’

এ বার, রাজ্যের পরিবহন দফতরের দায় তাঁর উপরে। সঙ্গে রয়ে গিয়েছে, সেই পুরনো দায়িত্বও, দলীয় পর্যবেক্ষ, জেলা মুর্শিদাবাদ।

Advertisement

নির্বাচনের মুখে, কান্দি পুরসভা কার্যত দখল করার পরে সেই শুভেন্দু অধিকারীর হুঁশিয়ারি ছিল— এ বার বেলডাঙা পুরসভা, তার পর একে একে বহরমপুর পুরসভা এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ।

শুভেন্দু জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘খেয়াল রাখুন, একে একে ওই পুরসভা আর জেলা পরিষদও আমাদের হাতেই আসবে!’’

এ বার সেই সুরেই কথা বলতে শুরু করলেন, সদ্য জঙ্গিপুর জয়ী বিধায়ক, জাকির হোসেন।

বামেদের গড় জঙ্গিপুরে নিঃশব্দে পালা বদলের পরে স্থানীয় বিড়ি শিল্পের মাথা জাকির হোসেন তাঁর ‘দিদি’র কাছে পুরস্কারও পেয়েছেন—শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী।

আর, তার পরেই শুভেন্দুর ঢঙে হুঙ্কার দিয়েছেন, ‘‘আমার পরের লক্ষ্য জঙ্গিপুর পুরসভা। এ বার আমরা ১২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিলাম। কিছু দিনের মধ্যেই সব ক’টিতেই এগিয়ে যাব।’’

তাঁর ‘হুঙ্কারের’ সমর্থনে দলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনও বলছেন, “জঙ্গিপুরে তৃণমুলের জয় প্রমাণ করে দিয়েছে সিপিএমের গড় জঙ্গিপুরে তৃণমূল কতটা এগিয়েছে। জাকির হোসেনকেই সামনে রেখে তার নেতৃত্বে আগামী পুর নির্বাচনে জঙ্গিপুরে লড়বে তৃণমুল।’’

জাকিরি দাওয়াই যে ঠিক কী হতে চলেছে তা স্পষ্ট নয় চল্লিশ বছর ধরে ওই এলাকায় দাপট দেখিয়ে আসা সিপিএমের। তবে কি চার দশকের জঙ্গিপুর পুরসভার কর্তৃত্বও এ বার হাতছাড়া হতে চলেছে সিপিএমের?

বামেদের মধ্যেই উঠে গিয়েছে সে প্রশ্ন।

জঙ্গিপুর শহর, সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের তালুক হিসেবে বলে পরিচিত। মৃগাঙ্ক নিজেই টানা ২৫ বছর পুরপ্রধান ছিলেন ওই পুরসভার। নিজের শহরেই ১৩টির মধ্যে ৯টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। রঘুনাথগঞ্জে ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪টি হাতছাড়া। ৩টিতে তৃণমুল ও একটিতে বিজেপি এগিয়ে। আর পুর নির্বাচনে কংগ্রেস পাঁচটি ওয়ার্ডে জয়ী হলেও, পুর এলাকার ৬৮টি বুথের মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪২ নম্বর বুথ ছাড়া কংগ্রেস সর্বত্রই শোচনীয় ভাবে পিছিয়ে পড়েছে।

গত ৪০ বছর ধরে জঙ্গিপুর পুরসভা সিপিএমের দখলে। খোদ অধীর চৌধুরী নিজে সদলবলে জঙ্গিপুরে ঘাঁটি গেড়ে থেকেও যে পুরসভার দখল নিতে পারেননি সেখানেই কিনা তৃণমূলের কাছে পিছিয়ে পড়েছে সিপিএম!

সিপিএম জঙ্গিপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক সোমনাথ সিংহ রায় এ বারের নির্বাচনে জাকিরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “পুর ভোট এখনও অনেক দেরি। ২০০৯ সালেও লোকসভায় প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন প্রার্থী হন জঙ্গিপুর পুরসভায় মাত্র ২টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিলাম আমরা। কাজেই জাকিরের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে পুর নির্বাচনে তা ঘটবে এমন মনে করার কোনও মানে হয় না।’’ সিপিএম ধরিয়ে দিচ্ছে— পুর ভোট হয় স্থানীয় ইস্যুর ভিত্তিতে। প্রার্থীও থাকেন এলাকার বাসিন্দা। কাজেই পুর নির্বাচনে সিপিএম ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে জঙ্গিপুরে। জঙ্গিপুরের সিপিএম পুর প্রধান মোজাহারুল ইসলামের কথায় অবশ্য তেমন আত্মবিশ্বাসের খোঁজ মিলছতে না— ‘‘৬৮টি বুথের মধ্যে ৩৮টিতে তৃণমূল এগিয়ে, তবে বাকিগুলিতে তো বামেরাই এগিয়ে ছিল। দেখা যাক!’’

জঙ্গিপুরে তৃণমূলের কাছে দলের পরাজয় যার কাছে সবচেয়ে বড় আঘাত, সিপিএমের সেই জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলছেন, “কেন হার তা নিয়ে বিশ্লেষণের কাজ চলছে। এটা অভাবিত ফল। তবে তার সঙ্গে পুর নির্বাচনের চারিত্রিক সম্পর্ক নেই। পুর নির্বাচন নেহাতই স্থানীয় নির্বাচন। খুব পরিচিত কাছের প্রার্থীরা তাতে ভোটে দাঁড়ান। এটাও মনে রাখতে হবে।’’ ২১ ওয়ার্ডের জঙ্গিপুর পুরসভায় ক:টা সামলে রাখতে পারে সিপিএম, এখন দেখার সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement