মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার।—ফাইল চিত্র।
শমসেরগঞ্জে ক্রমাগত বোমাবাজির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে জেলে পোরার জন্য নিদান দিয়েছেন পুলিশকে।
শুক্রবার সন্ধেয় শমসেরগঞ্জের নতুন তিন তলা থানা ভবনের উদ্বোধনে এসে মঞ্চ থেকেই জেলা পুলিশ সুপার এ নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘শমসেরগঞ্জে এত বোমাবাজি হচ্ছে কেন?’’ কোনও ভাবেই বোমাবাজির মতো ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না। যারা বোমাবাজি করছে তারা কে, কোন দলের, তা না দেখে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে হবে পুলিশকে। যে করেই হোক তাদের ধরে জেলে পুরতে হবে—হুঁশিয়ারি জেলা পুলিশ সুপারের।
এর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে শমসেরগঞ্জে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমাগত বোমাবাজি চলছে। এমনকি পুলিশের গাড়িতেও বোমা পড়েছে। পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারও করেছে বেশ কয়েক জনকে। তবে বার বার বোমাবাজি করে এলাকাকে উত্তপ্ত ও অশান্ত করার অভিযোগ শাসক দলের যে দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উঠেছে, সেই দুই গোষ্ঠীর নেতা-কর্মী-সমর্থক—সকলেই হাজির ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে।
পুলিশের মতে, সবচেয়ে বেশি বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে তিনপাকুড়িয়া ও হাউসনগর এলাকায়। এমনকি বৃহস্পতিবার দুপুরে রাস্তায় পড়ে থাকা বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয় রাজা শেখ নামে ১৫ বছরের এক কিশোর। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাউসনগর গ্রামে তার পরিবারের দাবি, রাস্তায় পড়ে থাকা কোনও কিছু তুলতে গেলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ওই বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। তাতেই গুরুতর জখম হয় ওই কিশোর।
শমসেরগঞ্জ থানার নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন জেলার পুলিশ সুপার। এতদিন এক বিঘে জমির উপর ছিল শমসেরগঞ্জ থানার দ্বিতল ভবন। আরও ১৫ কাঠা জমি কিনে আরও একতলা ভবন নির্মাণ করে তিন তলার নতুন থানা ভবন তৈরি হয়েছে।
নতুন করে তৈরি হয়েছে পুলিশ আধিকারিকদের থাকার জন্য তিনটি আবাসন, মহিলা বন্দিদের জন্য লক-আপ, জিম ছাড়াও মৃতদেহ রাখার জন্যও পৃথক ঘর তৈরি করা হয়েছে। এমনকি অভিযোগ জানাতে আসা লোকজন যাতে থানায় এসে অপেক্ষা করতে পারেন, তার জন্য বিশ্রাম কক্ষ বানানো হয়েছে।
শমসেরগঞ্জের ওসি অমিত ভকত জানান, বর্তমানে থানার কাজ বেড়েছে। সেই কারণেই থানার পরিসর বাড়াতেই নতুন ভবন নির্মাণ। পুলিশ কর্মীদের এতদিন থাকতে হত শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাড়িতে। তাতে নিরাপত্তার পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে যোগাযোগের সমস্যা হত। তিন তলা ভবন নির্মাণ হওয়ায় ওই সব সমস্যা এখন মিটে যাবে।
পুলিশ সুপার বলেন, “জেলার বহু থানার চেহারার বদল ঘটেছে। এখন সেই সব থানাকে দেখলে যেন মনে হয় কোনো প্রাইভেট কোম্পানীর অফিস। রাজ্য সরকারও পুলিশের জন্য অনেক কাজ করছেন। তাই পুলিশকেও কাজ করে দেখাতে হবে।”