ট্যাবের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকা নিয়ে বিভ্রাট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য টাকা কী ভাবে অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে, এ নিয়ে শোরগোল রাজ্যে। সোমবার বিকেলেই এ নিয়ে নবান্নে বৈঠক করছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। ঠিক তার আগে নতুন অভিযোগে তোলপাড় মুর্শিদাবাদ। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির মোট ৪৮৪১ জন পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গড়ে ২০ হাজার টাকা ঢুকেছে। ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে মমতার সরকার ট্যাব কেনার জন্য পড়ুয়াদের দেয় ১০ হাজার টাকা। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা কী ভাবে দ্বিগুণ টাকা পেল, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। দ্বিগুণ টাকা ঢোকার পর ওই পড়ুয়ারা পড়েছে আর এক সমস্যায়। কারণ, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে দেওয়া হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্যাবের জন্য বরাদ্দের দ্বিগুণ অর্থ যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জঙ্গিপুরের ন’টি হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রী। এ ছাড়াও রয়েছেন আমতলা হাই স্কুল, আনন্দমণি বালিকা বিদ্যালয়, ডাঙাপাড়া মুক্তারপুর হাই স্কুল, টুঙ্গি স্বামী স্বরূপানন্দ হাই স্কুল, বালি গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুল, বৃন্দাবনপুর এস স্মৃতি হাই স্কুল, দুর্লভপুর হাই স্কুল এবং সর্বাঙ্গপুর বিদ্যাপীঠের একাদশ-দ্বাদশের পড়ুয়ারা। টুঙ্গি স্বামী স্বরূপানন্দ হাই স্কুলের পড়ুয়া অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্যাবের জন্য ২০ হাজার করে টাকা ঢুকেছে। তার জন্য আমরা দায়ী নই। আমরা কিছু করিওনি। কিন্তু অ্যাকাউন্ট থেকে আর টাকা তুলতে পারছি না। সবাই নতুন ট্যাব কিনে ফেলল, আমরা কিনব কবে?’’ মুর্শিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক সুকদেব সরকার বলেন, ‘‘এই বিষয়গুলি আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমরা জেলা শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি। সেখান থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, অতি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’’ আবার একই জেলায় ট্যাবের টাকা পাননি শ্রীকান্ত বাটি, বাড়ালা, সেখদিঘির মতো এলাকার ছাত্রছাত্রীরা। দুটি বিষয় নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা শিক্ষা পরিদর্শক অমরকুমার শীল বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। আমরা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে।’’
পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে গেল কী ভাবে, গাফিলতি কোথায়, তার তদন্তে নেমে শিক্ষা দফতর জানতে পেরেছে, রাজ্য জুড়ে ৩০০-র বেশি পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জেলার জেলা পরিদর্শকদের কাছ থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে স্কুল শিক্ষা দফতর। তার পর জেলায় জেলায় ভেরিফিকেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকের উপস্থিতিতে এই নিয়ে জরুরি বৈঠক চলছে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, পূর্ব বর্ধমানের ৮৮ জন, পূর্ব মেদিনীপুরের ৬৫ জন এবং মালদহের ১৪৯ জন পড়ুয়া ট্যাবের টাকা পাননি। শনিবারই একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমার ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এর পিছনে যদি কেউ যুক্ত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি ‘সিস্টেম’-এ সমস্যা থাকে, তা হলে ‘সিস্টেম’ বদলে নেওয়া হবে।’’