চাপ বাড়ছিলই। কলেজে ছাত্রভর্তির সময়ে টাকা তোলায় জড়িতদের মধ্যে অন্তত কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যে ভাবমূর্তিতে লাগা কালির পোঁচ মোছা যাবে না, তৃণমূল নেতাদের তা বুঝতে বাকি ছিল না।
দু’দিন আগেই কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, কৃষ্ণনগরের বিপ্রদাস পালচৌধুরী ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হতে চাওয়া এক ছাত্রের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। শুক্রবার টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, “কলেজের ইউনিট সভাপতি সৌরভ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।” যদিও সৌরভের দাবি, ‘‘টাকা নেওয়া কেন, কোনও রকম অনৈতিক কাজের সঙ্গে আমি কখনও যুক্ত থাকিনি।”
টিএমসিপি সূত্রের খবর, ২০১৪-য় কলেজে ভর্তি হন সৌরভ। বছরের পর বছর পরীক্ষা দেননি। নানা আর্থিক লেনদেন তো আছেই, তাঁর আচরণে অপমানিত শিক্ষকেরা জেলাশাসকের কাছে অভিযোগও করেছিলেন। সম্প্রতি হাঁসখালি থেকে ভর্তি হতে আসা এক ছাত্র কারামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর থেকে এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। সৌরভ অবশ্য তা অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু শুধু সৌরভই কেন? বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজ এবং চাপড়া বাঙ্গালঝি কলেজের মতো বেশ কিছু জায়গায় নেতাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক শান্তনু সিংহের কটাক্ষ, ‘‘কান ধরে বেশি টানাটানি করলে কোন মাথা যে সামনে চলে আসবে, নেতারা ভালই জানেন। এক জনকে বলির পাঁঠা করতেই হত, তাই বহিষ্কারের নাটক!’’
আপাতত অনলাইনে ভর্তি চালু করে রাজ্য সরকার মুখরক্ষার চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষরক্ষা যে হবে, বলা শক্ত। গত কয়েক বছর ধরেই কল্যাণী মহাবিদ্যালয়ে ভর্তির ফর্ম জমা হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, গত বছর ফর্ম জমা করলেও কলেজে ঢোকার সময়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। পরে মেধা তালিকার নীচের দিকের পড়ুয়াদের টাকার বিনিময়ে ভর্তি করানো হয়। কেউ কলেজ ছেড়ে চলে গেলেও ফাঁকা আসনে ছাত্র ভর্তি হয় টাকা নিয়েই। ইংরেজি ও ভূগোলে ভর্তি হতে অন্তত তিরিশ হাজার টাকা দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবকের অভিযোগ, এ বছরই তাঁর মেয়ে মাইক্রোবায়োলজি পড়তে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এক নেতা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। তা দিতে না পারায় তাঁর মেয়ে ভর্তি হতে পারেননি। অয়ন অবশ্য দাবি করেন, “আমরা কলেজ ইউনিটগুলোর দিকে কড়া নজর রাখছি। কোনও দুর্নীতি ধরা পড়লেই তাড়িয়ে দেওয়া হবে।”