অনুপ্রবেশ ও অনুপ্রবেশে সহযোগিতার অপরাধে ধানতলা থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার আট। সোমবার। ছবি: সুদেব দাস।
টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশে সহযোগিতার অভিযোগে পাঁচ জন দালাল এবং নাবালক-সহ তিন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করল ধানতলা থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বাংলাদেশিরা হলেন তরুণ সানা ও প্রভাতী সানা। বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। এ ছাড়া ধৃত পাঁচ দালাল হল শেফালি বারুই, অমল বারুই, শাহরুখ মণ্ডল, গফফর মোল্লা এবং আলাউদ্দিন শেখ। তাদের মধ্যে শেফালি এবং অমল উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থানা এলাকার বাসিন্দা। বাকিরা ধানতলার বাসিন্দা। সোমবার ধৃতদের রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশে টানা অশান্তির প্রভাব সেখানকার আর্থ-সামাজিক পরিবেশে পড়েছে। অনেকেই পরিস্থিতির শিকার হয়ে কর্মহীন হয়েছেন। তাই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজর এড়িয়ে কাজের সন্ধানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসছেন অনেকেই। এমন অনুপ্রবেশের ঘটনায় রানাঘাট পুলিশ জেলায় শেষ এক বছরে ৫০টির বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অনুপ্রবেশে সহযোগিতার অপরাধে ধানতলা ও হাঁসখালি থানা এলাকার ১৬০ জনের বেশি দালালকে শেষ এক বছরে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তার পরেও অনুপ্রবেশে রাশ টানা যায়নি। সম্প্রতি অনুপ্রবেশে প্রবণতাও বেড়েছে বলে মনে করছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার আধিকারিকেরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে এক বাংলাদেশি দম্পতি সন্তানকে নিয়ে ধানতলা থানার সীমান্তবর্তী গ্রাম কানিবামুনি এলাকা দিয়ে এ দেশে প্রবেশ করেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। পুলিশি জেরায় ধৃতেরা অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অশান্তি অব্যাহত। বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মূলত কাজের সন্ধানে স্ত্রী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে অবৈধ ভাবে ভারতে এসেছেন।
তদন্তকারী এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করার জন্য সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে একটি চক্র কাজ করছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই রাতেই একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জন দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারাও অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।’’ তবে শেষ এক মাসে রানাঘাট পুলিশ জেলার অধীনে থাকা হাঁসখালি ও ধানতলা এলাকায় একের পর এক অনুপ্রবেশ, বাংলাদেশি গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা পুলিশ ও প্রশাসন। স্বাভাবিক ভাবেই সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে পুলিশের তরফেও নজরদারিবাড়ানো হয়েছে।
ধানতলা ও হাঁসখালি থানা এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামে বেশ কিছু জায়গায় এখনও উন্মুক্ত। বসেনি কাঁটাতারের বেড়া। সেই সঙ্গে শীতের রাতে ঘন কুয়াশার কারণে সহজেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে এক দেশ থেকে আর এক দেশের যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে। আবার অনুপ্রবেশে সহযোগিতার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক দালাল চক্র। রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘মূলত অনুপ্রবেশকারীরা কাজের সন্ধানেই এ দেশে আসছেন। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে যারা অনুপ্রবেশের কাজে যুক্ত থাকতে পারে, তাদের নামের তালিকা ও তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতির উপর আমাদেরনজর রয়েছে।’’