গিরীন্দ্রনাথ দাস। ফাইল চিত্র
স্কুলে ব্যাগ বিতরণ করতে গিয়ে খুদেদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গুণগান’ এবং তাঁর ছবিতে স্যালুট করে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। তবে এই প্রথম নয়, আগেও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন নদিয়ার হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক গিরীন্দ্রনাথ দাস। এক সময় মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির সাহেবরামপুর উদয়নগর কলোনি জুনিয়র স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, তাঁর আমলে ওই স্কুলে পঠনপাঠন ‘লাটে’ উঠেছিল। গিরীন্দ্রনাথ অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্কুল পরিচালনায় অদক্ষতার অভিযোগের পাশাপাশি স্কুলের শংসাপত্র জাল করার অভিযোগও উঠেছিল গিরীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গোলমালে জড়িয়ে নিজের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে তাঁকে জেলে যেতে হয় বলেও দাবি বাসিন্দাদের একাংশের। অভিযোগ, এক সময়ে রমরম করে চলা উদয়নগর কলোনি জুনিয়র স্কুল গিরীন্দ্রনাথের আমলে প্রায় ‘ছাত্রশূন্য’ হয়ে পড়েছিল। পরে তিনি অন্য স্কুলে বদলি হলে স্কুলে ‘স্থিতাবস্থা’ ফেরে। সাহেবরামপুরের প্রাক্তন শিক্ষক তথা তৃণমূলের জলঙ্গি দক্ষিণ অঞ্চলের সভাপতি মোহিত দেবনাথ বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের আমলেই উদয়নগর কলোনি জুনিয়র স্কুলের দৈন্য-দশা হয়েছিল। কোনও নিয়ম মানা হত না। তাঁর আমলে ছাত্রের সংখ্যা প্রায় শূন্যয় পৌঁছয়।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা এসএফআইয়ের সম্পাদক শাহনওয়াজ ইসলাম বলছেন, ‘‘ওই শিক্ষকের আমলে সাহেবরামপুর স্কুলের বেহাল দশা নিয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েছি। আন্দোলন করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ যদিও শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে গিরীন্দ্রনাথের সাফ জবাব, ‘‘সাহেবরামপুরের একদল লোক আমার দুর্নাম করতেই এমন কথা রটাচ্ছে। উদয়নগর স্কুল এখন একতলা থেকে দোতলা হয়েছে। পঠনপাঠনের মানও ভাল।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে একটি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সেটির সত্যতা যাচাই করেনি) পোস্ট করেছেন গিরীন্দ্রনাথ নিজেই। তাতে দেখা গিয়েছে, স্কুলে খুদে পড়ুয়াদের ব্যাগ বিতরণ করা হচ্ছে। সেই উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টেবিলে রেখে খুদেদের কাছে তাঁকে ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী’ বলছেন ওই প্রধান শিক্ষক। তাঁকে বলতে শোনা যায়— “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তোমাদের মিড-ডে মিল খাওয়াচ্ছেন, ব্যাগ দিচ্ছেন, পোশাক দিচ্ছেন, জুতো দিচ্ছেন, কন্যাশ্রীর টাকা দিচ্ছেন, ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দিচ্ছেন, বিনা পয়সায় রেশনের চাল-ডাল দিচ্ছেন... এ রকম মুখ্যমন্ত্রী সারা ভারতে দূরস্থান, সারা পৃথিবীতে জন্মায়নি আর জন্মাবেও না।”
এই ভিডিয়ো দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় বইছে। এক শিক্ষক শিক্ষাঙ্গনে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক কর্মীর মতো এমন কথা বলতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে গিরীন্দ্রনাথকে চেনেন এমন কেউ কেউ বলছেন, যে দল যখন ক্ষমতায় থেকেছে, তখন তিনি সেই দলের হয়েই গলা ফাটিয়েছেন। বাম আমলে ডোমকলের মধুরকুল হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় তাঁকে বামফ্রন্টকে সমর্থন করতে দেখা যেত। একদা ‘কংগ্রেসের গড়’ বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের মিটিং-মিছিলেও দু’-একবার তাঁকে দেখা গিয়েছে। মাঝে কিছু দিন বিজেপিতে ‘মন মজেছিল’ তাঁর। তবে বর্তমানে তিনি তৃণমূলের ‘সমর্থক’।
এ দিকে, নিন্দার ঝড় বইলেও গিরীন্দ্রনাথ এ দিনও দাবি করেছেন, যা করেছেন, বেশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখিয়ে, উন্নয়নের কথা বলে কোনও ভুল করিনি। ওঁকে স্যালুট দিয়েও ভুল করিনি। যা করেছি, ঠিক করেছি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আবার করব।’’