প্রতীকী ছবি
লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে মদের দোকানে পড়েছিল বিরাট লাইন। কিন্তু সেই উৎসাহে ভাটা পড়েছে কয়েক দিনেই। মদ বিক্রেতাদের বক্তব্য, একে তো মদের দাম বেড়েছে, তার উপরে মদের আসর বসাতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। তাতেই কমেছে মদের বিক্রি। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত মদ্যপানে অভ্যস্ত, তাঁরা ঝুঁকছেন চোলাইয়ের দিকে। তাতে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। চোলাই সব সময়ই বিপজ্জনক। তার উপরে এখন লকডাউনে চোলাই তৈরির সব উপাদান সহজে মিলছেও না। তাই অনেকে বিকল্পের ব্যবস্থা করছেন। তাতেই বিপদের ঝুঁকিও বাড়ছে। নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “নওদার কয়েকটি এলাকা থেকে চোলাই বিক্রির কথা শুনে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানান হয়। পুলিশও কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে।”
জেলার কয়েকটি ক্ষেত্রে মদ বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, বেশি দামের মদ বিক্রি সব থেকে বেশি কমেছে। আগে যে স্কচ হুইস্কির দাম ছিল প্রতি ৭৫০ মিলিগ্রামের ২৪৪০ টাকা, সেটা বেড়ে হয়েছে ৩১০০ টাকার বেশি। ১০৫০ টাকা দামের হুইস্কির দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৪০০ টাকা। যেটার দাম ৮৭০ টাকা সেটা হয়েছে ১১২০ টাকা। ৫২০ টাকার হুইস্কি বেড়ে হয়েছে ৬৭০ টাকা। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ৩১০০ টাকার মদ বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না। ১৪০০ টাকা দামের মদও বিক্রি আগের থেকে অনেক কমেছে। তার বদলে ৬৭০ বা ১১২০ টাকা দামের মদের বিক্রি আগের থেকে বেশি। তবে জিন, ভদকার বিক্রি অনেকটা কমেছে।
কেন এই অবস্থা?
মদের ক্রেতা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, মদের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। দাম আগেও বেড়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্য রকম। লকডাউন ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে সব রকম অনুষ্ঠান বন্ধ। ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠান নেই। বিয়ে, বিবাহ বার্ষিকী, জন্মদিন পালন বন্ধ। হোটেল, বার বন্ধ বা কড়াকড়ি যথেষ্ট। এক স্থানে জমায়েত হওয়ার সুযোগ নেই। তার সঙ্গে পুলিশ খুব সচেতন। তাতে মদ খাওয়ার সুযোগ কমছে। সব মিলিয়ে মদ বিক্রি কমেছে।
বেলডাঙা কালীতলা এলাকার বিলিতি মদের কারবারি মিঠু গায়েন বলেন, “মদের বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে। যারা বিলিতি মদ বা দিশি কিনতে পারছেন না তারা চোলাই দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। এতে চোলাই বিক্রি বেড়েছে।” বেলডাঙা শহর এলাকার বিক্রিতা অরিজিৎ ঘোষ জানাচ্ছেন, “মদের দাম ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে মূলধন লাগিয়ে মদ বিক্রি হত তার থেকে বেশি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি কমায় আয় অনেক কমেছে। বিলিতি ও দিশি দুই মদ বিক্রিই ৬০-৬৫ শতাংশ কমেছে।”
লালবাগ মহকুমা শহর বা বহরমপুরের অনেক দোকানে মদের দোকানের সামনে ভিড় দেখা মিলছে না। লালবাগ শহরের এক মদের কারবারি জানাচ্ছেন, গত কয়েকদিনে মদের বিক্রি অনেক কমেছে। একই কথা শোনা গিয়েছে, কান্দির বিলিতি মদের ব্যবসায়ী স্বপন ঘোষের মুখে। তিনি শুক্রবার বলেন, “বিক্রির গতি দেখে বোঝা যাচ্ছে বিদিশি মদ বিক্রি প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে বিয়ার বিক্রি কমেছে ৬০ শতাংশ। তার কারণ হিসাবে মনে হয়েছে মদের দাম বৃদ্ধি ও মানুষের হাতে বর্তমানে টাকার যোগান কম।” ডোমকলের এক ব্যবসায়ী বলেন, “সরকারি কর্মী ছাড়া সকলের আয় কমেছে অনেক। সঙ্গে মদের দাম বৃদ্ধি। তার জেরে মদের বিক্রি পঞ্চাশ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।” তারা জানাচ্ছেন, এদের মধ্যে অনেকে দামি মদ কিনতে না পেরে চোলাই কিনে অভাব মেটাচ্ছেন।
একই অবস্থা রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের। কারবারিরা জানাচ্ছেন, বিলিতি মদ শতকরা ৩০ শতাংশ বিক্রি কমেছে। দিশি মদের বিক্রি আগের থেকে সামন্য হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিক্রি বেড়েছে চোলাই মদের। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সামসেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর ও দোগাছি নওপাড়া এই দুই পঞ্চায়েতের ৭-৮ টা গ্রামে প্রচুর পরিমানে চোলাই আসছে ঝাড়খন্ড থেকে। এতে দিশি ও বিলিতি মদ বিক্রি মার খাচ্ছে। সূত্রের খবর, সাগরদিঘির পাটকেলডাঙা ও গোবর্ধনডাঙার ১৫টি গ্রামে চোলাই রমরমিয়ে চলছে। ভাগীরথীর চরে ফের চোলাইয়ের ঠেক বসছে। বীরভূম লাগোয়া রঘুনাথগঞ্জের মণ্ডলপুর ও সেণ্ডা এলাকায় চোলাই তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে রমরমিয়ে।
আবগাড়ি দফতরের আধিকারিক অমৃতলাল চৌধুরী বলেন, “বিলিতি মদ বিক্রি কমেছে তাই চোলাই বিক্রি বেড়েছে এরকম কোন ব্যাপার নয়। শুধু মদ নয় অন্য সামগ্রী বিক্রিও কমেছে। চোলাই বিক্রি রোধে প্রতিনিয়ত আমরা তল্লাশি চালাচ্ছি।’’