পৈতৃক ভিটে থেকেই উৎখাত হতে হয়েছিল তাঁদের। নেতা থেকে প্রশাসন— ঘুরে শুনতে হয়েছিল চেনা লব্জ, ‘দেখছি’।
শেষতক তাই কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আম দরবারে সটান হাজির হয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন পেয়াদা। সব শুনে ওএসডি-কে তলব করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘থানা যেন ঠেলে না দেয়, দেখুন তো।’
না ঠেলে দেয়নি। বরং কাছে টেনে চেয়ারে বসিয়ে সাহাবুদ্দিনকে মোলায়েম গলায় জানিয়ে দিয়েছে, ‘‘ও বাজডিতে মাস দশেক থাকুন, তার পরে কিন্তু ছেড়ে লে যেতে হবে!’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও সালিশি বসিয়ে এটাই ছিল চাকদহ থানার নিদান!
স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের রাঙা চোখের সামনে অসহায় সাহাবুদ্দিনকে দশ মাসের বেশি ঘরে ফেরাতে তারা যে অক্ষম, সোজা সাপটা তাও বলে দিয়েছেন চাকদহ থানার পুলিশ।
যাদের বিরুদ্ধে ‘ঘরছাড়া’ করার অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত তাদের শর্তেই মিমাংসা করেছে পুলিশ বলে অভিযোগ করেছেন সাহাবুদ্দিন।
সালিশির সময় থানায় হাজির ছিলেন চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জাকির হোসেন মণ্ডল। সাহাবুদ্দিনের অভিযোগ, দুই অভিযুক্ত জাকিরের ঘনিষ্ঠ। এবং, পুরো ঘটনাটিতে তাঁর মদত রয়েছে।
সাহাবুদ্দিনের অভিযোগ, সালিশি সভায় তাঁকে এক রকম জোর করে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, শাসক দলের নেতা এবং পুলিশ কেন খাপ পঞ্চায়েতের ভূমিকা নেবে? চাকদহ থানার আইসি পিন্টু সাহা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। জেলা পুলিশ সুপার শিষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘এমনটা জানতাম না তো, খোঁজ নিচ্ছি।’’
চাঁদুরিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নওদা দুর্গাপুরে আড়াই কাঠা জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেছিলেন সাহাবুদ্দিন। তিনি রেডিমেড পোষাক সেলাই করেন। কলকাতা থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে অর্ডার সাপ্লায়ারের কাজও করেন। গত ১৪ বছর ধরে তিনি ওই বাড়িতে বাস করছেন। বড় রাস্তা থেকে একটি গলি রস্তা দিয়ে তাঁর বাড়িতে ঢুকতে হয়। সাহাবুদ্দিনের জমির বর্তমান বাজারদর কাঠা প্রতি প্রায় ছ’লক্ষ টাকা। অভিযোগ, নানাভাবে সেই জমি দখল করতে চাইছে তাঁর প্রতিবেশী দুই ভাই কাসেম এবং হোসেন তরফদার।
সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘তরফদারদের দাবি না মানায় তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিরক্ত করতে শুরু করে দুই ভাই। বছরখানেক আগে বাড়িতে ঢোকার রাস্তার উপর দেওয়াল গেঁথে দেয়। গৃহবন্দি হয়ে পড়ায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হই।’’ ঘরছাড়া হওয়ার পরে থানা, বিডিও-র অফিস সব জায়গায় ঘুরেও সাড়া মেলেনি। এর পরে এসডিও-র আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কল্যাণীর এসডিও স্বপন কুণ্ডু তা স্বীকার করে নিয়েছেন। বলেন, ‘‘আমার আদালতে শুনানি পর্ব শেষ হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে নির্দেশও দেওয়া হবে।’’
ওই সালিশি সাহাবুদ্দিন জানান, তাঁর ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা। বাড়িতে তাকতে না পারলে পরীক্ষা দেবে কী করে? যা শুনে তরফদার ভাইয়েরা পুলিশের সামনেই জানিয়ে ছিল— তা হলে পরীক্ষা পর্যন্ত ওই বাড়িতে থাকতে পারে সাহাবুদ্দিন।
আর জাকির বলছেন, ‘‘ওর ফয়সালা তো থানায় হয়ে গেছে। আবার কী!’’