রাস্তার উপর উঠে এসেছে দোকান। —নিজস্ব চিত্র
সামনে লম্বা মিছিল। আটকা পড়েছে স্কুলগাড়ি। বাচ্চারা গরমে, তেষ্টায় কান্না জুড়েছে। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। মিছিল সরে রাস্তা যখন ফাঁকা হল ততক্ষণে খিদে-কান্নায় নেতিয়ে পড়েছে বাচ্চারা।
অভিভাবকদের কথায়, এই তো সবে শুরু। ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই বাড়বে দুর্ভোগ।
শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা করিমপুর-বহরমপুর রাজ্য সড়ক এখন হকারদের দখলে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও তৈরি হচ্ছে দোকান। ফলে যত দিন যাচ্ছে রাস্তা দিনকে দিন সংকীর্ণ হচ্ছে। দিনের ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় গাড়ি চাপ বাড়লে কার্যত চলাফেরার কোনও উপায় থাকে না। ট্রাফিক জ্যামে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে।
অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের মদতে বা কখনও প্রশাসনের নীরবতায় এমন অবস্থা হয়েছে। খোদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অস্থায়ী দোকান রাস্তায় এসে পড়েছে। লে ফুটপাথ বলে কিছু নেই। প্রাণের ঝুঁকি দিয়ে মূল রাস্তা ধরে হাঁটতে হয় পথচারীদের। এর উপর জুড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল। দাপট দেখাতে রাজনৈতিকগুলি প্রচুর সমর্থক জড়ো করছে। তাই একবার মিছিল রাস্তায় এসে পড়লে নড়ার জো থাকে না। বিকল্প রাস্তা না পেয়ে লম্বা লাইন দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি। স্কুলবাস থেকে অ্যাম্বুল্যান্স সব আটকে যাচ্ছে মিছিলের গেরোয়। কিন্তু তা নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই রাজনৈতিক দলের। তাদের সাফাই, রাস্তা ফাঁকা রাখার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের। তাদের অনুমতি নিয়েই মিছিল বেরোচ্ছে।
শহর থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে তেমন কোনও রাস্তা নেই। এক সময় রাস্তার দু’পাশ ফাঁকা থাকলেও মহকুমা শহর ঘোষণা হওয়ার পর থেকে জমজমাট হয়েছে ডোমকল। রাস্তার দু’পাশে হু হু করে গজিয়ে উঠেছে দোকানপাট। একটু একটু করে রাস্তা চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। প্রথমে ঠেলাগাড়ি, ঝুপড়ি দোকনা ছিল। এখন ফুটপাথের উপর তৈরি হয়েছে পাকা নির্মাণ। খোদ মহকুমাশাসকের অফিস ঢাকা পড়েছে সেই নির্মাণের ফলে। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘একটা সময় ওই নির্মাণ সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও রাজনৈতিক দলগুলির আপত্তিতে তা আর সম্ভব হয়নি।’’ ডোমকলের বাসিন্দা তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘‘এমনিতেই দিনের ব্যস্ত সময়ে যানজট লেগেই রয়েছে। ব্রিজমোড় এলাকায় প্রতিদিন যানজটে পড়ে নাকানি-চোবানি খাচ্ছে মানুষ। তারপরে মিছিলে-মিছিলে স্তব্ধ হয়ে পড়ছে ডোমকল।’’
গত কয়েকদিন আগে একটি রাজনৈতিক দলের মিছলে আটকে পড়ে প্রায় ১০ কিমি ঘুরে বহরমপুর যেতে হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সকে। চালকের দাবি, ‘‘মিছিলে আটকে পড়া গাড়ির সারিতেই রাস্তা স্তব্ধ। রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে প্রায় ১০ কিমি ঘুরে গ্রামের খারাপ রাস্তা ধরে জিৎপুর হয়ে বহরমপুরে রোগীকে নিয়ে যাই।’’ একই অবস্থা এক ছাত্রের অভিভাবকের কথায়, ‘‘ছেলের স্কুলবাস ডোমকল পুরানো বিডিও মোড়ে আটকে পড়ে। গরম তেষ্টায় অনেক বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে। পরে অভিভাবকেরা গিয়ে তাদের নিয়ে আসেন।’’
মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে মিছিল করার সময় রাস্তা একটিা ফাঁকা রাখতে।’’ কিন্তু সে কথা শুনছে কে। রাস্তা জুড়ে মিছিল চলছেই।