কৃষক সভার জাতীয় সড়ক অবরোধ।
কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ বিলের প্রতিবাদে ও কৃষকদের ফসলের লাভজনক দাম দেওয়া, সরকারি ভাবে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনা, বোরো চাষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির সমর্থকরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করলেন বড়ঞার কুলি চৌরাস্তার মোড়ে।
মঙ্গলবার সকাল নটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়ক ও বহরমপুর-সিউড়ি রাজ্য সড়কের উপর অবস্থান বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাম-কর্মী সমর্থকরা। টানা দু’ঘন্টার বিক্ষোভে এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বামফ্রন্ট সূত্রে জানা যায়, এ দিন কান্দি মহকুমা ছাড়াও মুর্শিদাবাদ জেলার ইসলামপুর, বহরমপুরের চুনাখালির মোড়, ভাকুড়ীর মোড়, উত্তরপাড়ার মোড়, রঘুনাথগঞ্জের ওমরপুর মোড়ে একই দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ দেখায় বামফ্রন্টের নেতা কর্মীরা।
বামফ্রন্টের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার কুইন্টাল প্রতি ১৩৭০ টাকা ধানের দাম ধার্য করলেও রাজ্য সাতশো থেকে সাড়ে সাতশো টাকায় ধান কিনছে। এতে রাজ্যের চাষিদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বামফ্রন্টের কৃষকসভার রাজ্য কমিটির সদস্য মুজাফফর হোসেন বলেন, “রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় রাজ্যজুড়ে চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। চাষ করার পরে যেটুকু খরচ হচ্ছে, ধান বিক্রি করে সেটাও উঠছে না। ধান-সহ সব্জির ও অন্যান্য ফসল ন্যায্য দামে চাষিদের কাছ থেকে কিনতে হবে।” ওই দাবি না মানা হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন হবে বলেও দাবি করেন মুজাফফর হোসেন।
অন্য দিকে, একই দাবিতে পূর্ব মেদিনীপুরেরও বিভিন্ন জায়গায় বামকর্মীরা পথে নামেন। জেলা সদর তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ও তমলুক শ্রীরামপুর সড়কের সংযোগ স্থলে বাম কৃষক সংগঠনের সদস্য-সমর্থকরা সকাল ৯ টা থেকে অবরোধ শুরু করেন। বেলা ১১ টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহ, দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, সিপিআই জেলা সম্পাদক অশোক দিন্দা, আরএসপি জেলা সম্পাদক অমৃত মাইতি, ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক গোপাল মাইতি ও এসইউসি জেলাসম্পাদকমণ্ডলী সদস্য প্রমুখ।
সভায় তাপসবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী সাংসদরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।’’
তমলুকের হাসপাতাল মোড়ে ব্যস্ত হলদিয়া-মেচেদা সড়ক আটকে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে অবরোধের জেরে বাস, লরি, ট্যাক্সি আটকে পড়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধের জেরে হয়রানির শিকার হন অফিসে যাতায়াতকারী নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। অবরোধে আটকে পড়া বাসযাত্রী মেচেদার বাসিন্দা শশধর জানা বলেন, ‘‘মহিষাদলে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এভাবে আটকে পড়তে হবে জানতাম না।’’ নন্দকুমার থেকে পাঁশকুড়ায় আত্মীয়বাড়িতে যাওয়া প্রৌ়ঢ়া শ্যামলী দাসের কথায়, ‘‘মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য সকালে বেরিয়েছিলাম। এখানে এসে রাস্তা বন্ধ হওয়ার কারণে বাস আটকে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়ে গেলাম।’’
হয়রানির ফলে অবরোধ চলার মাঝপথে পুলিশ বাম নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু বাম নেতারা অবরোধ তোলায় রাজি হননি। উল্টে প্রকাশ্যে বাম নেতৃত্ব হুঁশিয়ারি দেন, পুলিশ তাঁদের অবরোধ তোলার চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হবে। এসময় পুলিশের সামনেই অবরোধকারীরা স্লোগান দিতে থাকে। শেষমেশ বেলা ১১ টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।