প্রতীকী ছবি।
মাত্র পনেরো দিনেই ছবিটা বদলে গিয়েছে অনেকটা। প্রতি দশ গ্রাম গয়নার সোনার দাম এক ঝটকায় প্রায় হাজার তিনেক টাকা দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ধনতেরাসের মুখে। বেশ কয়েক বছর হল মেয়ের বিয়ে ছাড়াও গয়না কিনতে অভ্যস্ত হয়েছেন এ রাজ্যের ক্রেতারা। সোনার হাতে সোনার কাঁকনের প্রেমে হাবুডুবু বাঙালি এখন সারা বছরই সাগ্রহে অপেক্ষা করে পাঁজিপুঁথি মিলিয়ে কালীপুজোর দু’দিন আগে ধনতেরাসে সোনা কেনার জন্য। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছেও আদতে ভিন্ রাজ্য থেকে আগত ক্রমশ এই উৎসব গুরুত্বপূর্ণ মরশুম হয়ে উঠছে।
এমনিতে করোনাকালে সোনার বাজারে অস্বাভাবিক ওঠাপড়ার ফলে সোনা কেনাবেচা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। মার্চে লকডাউন শুরুর সময়ে দশ গ্রাম সোনার দাম ছিল ৪০ হাজার টাকা। যা বাড়তে বাড়তে এক সময়ে পৌঁছে যায় ৫৬৮০০ টাকায়। পরে দাম কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরের শেষে প্রায় ছ’হাজার টাকা কমে যায়। বাজারও কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল। সকলেই আশা করেছিলেন এই দামে ধনতেরাসের বিকিকিনি নেহাত মন্দ হবে না।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের সেই আশায় ছাই দিয়ে শুক্রবারই ফের ৮০০ টাকা বেড়ে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম (জিএসটি-সহ) হয়েছে ৫৪৬১০ টাকা। গয়নার সোনা ৫১ হাজার টাকার উপর। অখিল ভারতীয় স্বর্ণকার সঙ্ঘের রাজ্যের সাংগঠনিক সম্পাদক তথা দক্ষিণ কৃষ্ণনগর স্বর্ণশিল্পী ওয়েলফেয়ার সমিতির সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য জানান, এই ধনতেরাস নিয়ে তিনি মোটেই আশাবাদী নন। তাঁর কথায়, “আমাদের লড়াই এখন ত্রিমুখী। অতিমারি, সোনার বর্ধিত দাম এবং বিভিন্ন কোম্পানির শো-রুম। আমাদের দোকানে সোনার দাম কম হলেও মানুষ এখন শো-রুমের দিকেই ঝুঁকছেন। আমাদের অস্ত্র ছিল দাম। ধনতেরাসের মুখে সেই দামও তিন হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় মনে হয় না সাধারণ খরিদ্দার তেমন ভাবে সোনা কিনতে আসবেন।”
কালীপুজোর আগের ত্রয়োদশী তিথিকে ‘ধনতেরাস’ নামে পালন করা হয়। নবদ্বীপের স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপালচাঁদ মল্লিকের মতে, সোনার দরে ঘন-ঘন পরিবর্তনে বাজার বড় ধাক্কা খাবে। তিনি বলেন, “বুধবার পর্যন্ত দোকানে যা-ও ভিড় ছিল, বৃহস্পতিবার থেকে ছবিটা একদম পাল্টে গিয়েছে। লোকে দোকানে আসছে আর দরদাম করে চলে যাচ্ছে। মজুরিতে ছাড় বা অন্য সুবিধা দিয়েও বা কতটা ব্যবসা পাব?”
সংগঠনের সম্পাদক তরুণকুমার দে-ও বলছেন, “ধনতেরাসে এ বার তেমন গয়না বুকিং হয়নি। বুধবার থেকে ট্রেন চললে হয়তো কিছু লোক আসবে। তাতে বাজারের কতটা উপকার হয়, দেখা যাক।”