সরানো হচ্ছে গেরস্তালি। হোসেনপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
আতঙ্ক কাটছে না ফরাক্কার হোসেনপুরের। নদীর গ্রাস থেকে বাঁচতে বাড়ির শেষ সম্বলটুকু নিয়ে এক রাতেই ঘর ছাড়া হয়েছেন ৭০টি পরিবার। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের গ্রামের আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ বা ফ্লাড শেল্টারে। সকাল থেকে কিছুটা শান্ত হয়েছে গঙ্গা। বিডিও হোসেনপুরে এসে পরিস্থিতি দেখে ফিরে গেলেও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনও সরকারি ত্রাণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। সকালে এলাকায় ঘুরে গেছেন ফরাক্কা ব্যারাজের ইঞ্জিনিয়ারে। শনিবার সকাল থেকেই ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরুর আশ্বাসও দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু মুখের কথায় কি আতঙ্ক কাটে!
ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে পড়লেও হোসেনপুর গ্রামে যেতে হয় ফরাক্কা ব্যারাজ পেরিয়ে মালদহের বৈষ্ণবনগরের পথ ঘুরে। গ্রামে হাজার দুয়েকের বসত। সব পরিবারই তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। শিক্ষার হার মেরেকেটে ৪৬ শতাংশ। পেশা বলতে বেশির ভাগই মৎস্যজীবী ও কৃষিজীবী। একাধিকবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পিছিয়ে গিয়ে দু-এক কাঠা করে সস্তায় জমি কিনে ফের বসতি গড়ে তুলেছেন চরেই।
গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য হরিপদ মন্ডলও তাঁদেরই এক জন। প্রথমবার ঘর ছাড়া হয়ে পাকা বাড়ি গড়েছিলেন দু’কাঠা জমি কিনে। সেই বাড়ি শুক্রবার নদীতে পড়ার অপেক্ষায় ঝুলে রয়েছে। বলছেন, “সামনে গঙ্গা। কখন গিলবে কে জানে!’’ বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত ৪১টি বাড়ি গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে হোসেনপুরে। নদী পাড়ের প্রায় শতাধিক পরিবার। নদী থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে বাড়ি দিলীপ মন্ডলের। বলছেন, “গোটা রাত জেগে যতটুকু পাড়ছি মালপত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হাত লাগিয়েছি সবাই। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভিটেমাটি হারাতে চলেছি আমরা।”
ফরাক্কার বিডিও আবুল আলা মাবুদ আনসার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। স্কুলগুলিকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের থাকা ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখতে।