‘দিশেহারা’ বিরোধী দলগুলি
TMC

Protest: দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলনের ধার কমায় প্রশ্ন

এক সপ্তাহ আগেও শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি ইস্যুতে জেলায় মিছিল করছিল বিরোধীরা।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ০৮:৩৭
Share:

ফাইল চিত্র।

জেলা বিভাজনের আলোচনায় মুর্শিদাবাদে কি চাপা পড়ে গেল শাসক দলের বিরুদ্ধে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদের শুরু করা আন্দোলন? রাজনীতির কারবারিদের একাংশের দাবি, শাসক দলের এই ঘোষণায় জেলায় বিরোধীরা কার্যত দিশেহারা।

Advertisement

তৃণমূলের বিরুদ্ধে জেলায় আন্দোলনের সুযোগ নিতে বিরোধীরা কার্যত ব্যর্থ হওয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একদা বাম ও কংগ্রেসের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল মুর্শিদাবাদ। দু’দলই এখন সেখানে কার্যত ‘শূন্য’ দাঁড়িয়ে। এক সপ্তাহ আগেও শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি ইস্যুতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মিছিল, সভা করছিল বিরোধীরা। এরই মধ্যে রাজ্যে নতুন সাতটি জেলা ঘোষণা এবং মুর্শিদাবাদকে ভেঙে আরও দু’টি জেলা তৈরির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতেই থিতিয়ে গিয়েছে দুর্নীতি ইস্যুতে আন্দোলন। পরিবর্তে নতুন দুই জেলায় মুর্শিদাবাদ নাম রাখার দাবিতে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। পথে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠনও।

জেলা বিভাজনের আগে একাধিক বিরোধী দলের বিক্ষোভ শহরাঞ্চলে দেখা গেলেও গ্রামীণ এলাকায় সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পেরেছে, এমন মনে করছেন না তাঁরা নিজেরাও। দীর্ঘদিনের সিপিএম বিধায়ক তোয়াব আলি বলছেন, “সাংগঠনিক দুর্বলতা এর বড় কারণ। মানুষের মনে দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ আছে। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ নেই বললেই চলে। সর্বত্রই এ নিয়ে আলোচনায় শাসক-বিরোধী মনোভাব ফুটে উঠলেও তা প্রকাশে এখনও মানুষের মধ্যে কাজ করছে ভয়। শাসক দলের হাতে হেনস্থা হওয়ার ভয়। পুলিশি সন্ত্রাসের ভয়। মিথ্যে কেসে ফাঁসার ভয়। আর এই আতঙ্কই এই সঙ্কটে বড় ভরসা হয়ে উঠেছে তৃণমুলের।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় অবশ্য তা মনে করেন না। তাঁর কথায়, “প্রতিবাদ হচ্ছে না, তা নয়, গ্রামেও মানুষের কাছে যাচ্ছি আমরা। বিরোধীরা গ্রামে গেলে আগে তাঁদের ধারে কাছে আসত না মানুষ, পাছে তাঁদের লক্ষ্মীর ভান্ডার, আবাস প্রকল্প থেকে নাম কাটা পড়ে। এখন সেই সব মানুষ আমাদের কথা শুনতে সভায় আসছেন। তাঁদের মনে শাসক দলের প্রতি তীব্র ক্ষোভ আছে। সেই ক্ষোভকে বিক্ষোভে পরিণত করার চেষ্টার মধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা বিভাজনের চমক।’’

Advertisement

কংগ্রেসের জেলার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত দাস বলেন, “কংগ্রেস ক্ষমতা অনুযায়ী আন্দোলন করেছে জেলার ২৬টি ব্লকেই। কংগ্রেস সনিয়া গান্ধী, রাহুলকে ইডির হেনস্থা ও শিক্ষায় দুর্নীতি— দু’টি বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে। ফলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আন্দোলন সাধারণের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। শাসক দল দুর্নীতির দৃষ্টি ঘোরাতে নতুন জেলা ঘোষণার কথা এই সময় জানিয়েছে।’’

জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি ও প্রাক্তন সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলছেন, “এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি তৃণমূলের আমলে আগে সামনে আসেনি। বিরোধী আন্দোলন ক্রমে দানা বাঁধছিল এই জেলায়। তাকে ঠেকাতেই জেলা জেলা বিভাজনের ঘোষণায় শিক্ষা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চাপা পড়েছে।” তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান অবশ্য বলছেন, “জেলায় তৃণমূলের যা সাংগঠনিক শক্তি তাতে যে কোনও সময় পাল্টা পথে নামা যায়। কিন্তু রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করার। কেউ ভুল করেছে, দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে। বিপুল সংখ্যায় জিতে ক্ষমতায় এসেছে দল। বিরোধীদের মুর্শিদাবাদে কোনও অস্তিত্বই নেই। তাই তাদের বাজার গরম করার চেষ্টা ব্যর্থ। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement