ভৈরব উধাও, নদী এখন আবাদি মাঠ

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হন দীঘলকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইরাজুল মণ্ডল। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়ার কথা উঠে এল আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কল্লোল প্রামাণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর। সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হন দীঘলকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইরাজুল মণ্ডল। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়ার কথা উঠে এল আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কল্লোল প্রামাণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:১৫
Share:

ভৈরব নদীর উপর সেতু নেই। এ ভাবেই চলে পারাপার। ডান দিকে, খালের চেহারা নিয়েছে নদী, তাতেই চলছে চাষবাস। — নিজস্ব চিত্র

• এলাকার বহু গরিব মানুষই পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না। কবে তাদের বকেয়া টাকা শোধ করবে পঞ্চায়েত?

Advertisement

পিয়াস আলি খান, দীঘলকান্দি

গত আর্থিক বছরে পঞ্চায়েতে মোট আট কোটি টাকার একশো দিনের কাজ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা দেওয়া বাকি রয়েছে। নোট বাতিলের জন্য এই সমস্যা হয়েছে। মিটলেই ওই টাকা দেওয়া হবে।

Advertisement

• সীমান্তের গেটের ও পারে অনেক চাষি নিজের জমিতে চাষ করতে যান। জমিতে দেওয়ার সার বা সাইকেলে সেচের শ্যালোমেশিন নিয়ে যেতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী চাষিদের বাধা দেয়।

আলাউদ্দিন মণ্ডল, টেইপুর

পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় আটটি গ্রাম সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া লাগোয়া। চাষিদের সমস্যা নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে আগেও বহু বার বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তখনকার মতো সমস্যা মিটে গেলেও নতুন ব্যাটেলিয়ন এলে আবার সমস্যা তৈরি হয়।

• পঞ্চায়েতের অনেক এলাকায় যেমন গন্ধরাজপুর, রাখালগাছি, দীঘলকান্দির বিভিন্ন এলাকা আর্সেনিক-প্রবণ। অথচ বেশির ভাগ মানুষ পানীয় জল পায় না। পঞ্চায়েত কি কোনও ব্যবস্থা করবে না?

রতন বালা, দীঘলকান্দি

পঞ্চায়েত এলাকায় মোট চারটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাম্প রয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। তবে কিছু গ্রামে সেই জল এখনও পৌঁছয়নি। সেখানে নতুন সংযোগ করে জল দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের বলা হয়েছে।

• এক সময় পঞ্চায়েত এলাকার ভৈরব নদীর উপর নির্ভর করতেন চাষি ও মৎস্যজীবীরা। সংস্কারের অভাবে এখন সেই নদীতেই চলছে চাষবাস। ভৈরব খাল সংস্কার করলে এলাকার প্রচুর চাষি, মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

পরাণচন্দ্র ব্যাপারি, নিরঞ্জন কলোনি

গন্ধরাজপুর থেকে কাগজিপাড়া অবধি ভৈরব প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে গিয়েছে। ওই নদীর জমি এখন এলাকার মানুষ দখল করে চাষ করছে। পঞ্চায়েত জমি মাপজোকের পর একশো দিনের কাজ করে সংস্কার করার কথা ভেবেছে।

• এই এলাকায় ২৫টি গ্রামে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ বাস করে। বেশির ভাগ মানুষ কর্মসূত্রে দেশের বাইরে বা রাজ্যের বাইরে থাকেন। তাদের পাঠানো টাকায় সংসার চলে। অথচ পঞ্চায়েত এলাকায় একটিও ব্যাঙ্ক বা এটিএম নেই।

বিল্লাল মণ্ডল, টেইপুর

আগেও আমরা কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। চেষ্টা চলছে।

• সরকার বহু লক্ষ টাকা ব্যয়ে গন্ধরাজপুর এলাকায় কিছু সজলধারা জল প্রকল্পের কাজ করেছিল। মাস ছয়েক জল পেলেও গত পাঁচ বছর সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

গৌতম বিশ্বাস, গন্ধরাজপুর।

ওগুলো পুরনো প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছিল। এখন ওই এলাকায় ট্যাপের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়।

• বয়স পেরিয়ে গেলেও অনেকেরই রেশন কার্ড হয়নি। যদিবা কিছু মানুষ খাদ্য সুরক্ষার নতুন কার্ড পেয়েছে, সেই কার্ডের নামের বানান ভুল রয়েছে।

স্বপন মিত্র, নিরঞ্জনকলোনি

খাদ্য সুরক্ষার নতুন ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হচ্ছে। কিছু নামের বানান সত্যিই ভুল রয়েছে। সেগুলি সংশোধন করা হবে। বাকিরা যাতে তাড়াতাড়ি কার্ড পায়, প্রশাসনকে জানাব।

• আউদিয়া, রাখালগাছি, দীঘলকান্দি রংপুর এলাকা থেকে মুরুটিয়া বাজার অবধি প্রধান রাস্তার বেহাল দশা। চাষে উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে কিংবা রোগীকে করিমপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়।

উত্তম ঘোষ, গোয়াবাড়ি

২০১৩ সালে শেষ বার জেলা পরিষদ ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই রাস্তার কাজ করেছিল। রাস্তা সারানোর বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।

• এলাকার মুরুটিয়া-সহ বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে শৌচালয় নেই। যাতায়াতের পথে বিশেষ করে মহিলাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়।

অপর্ণা মণ্ডল, দীঘলকান্দি

পঞ্চায়েত এলাকায় ও সীমান্তে কয়েকটি শৌচালয় বানিয়েছে পঞ্চায়েত। তবে কিছু জায়গায় শৌচালয় বানানোর প্রয়োজন। সেগুলি আগামী দিনে তৈরি করবে পঞ্চায়েত।

• পঞ্চায়েতের হাতিশালা ও পাশের নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তারকগঞ্জের মধ্যে ভৈরব খাল রয়েছে। বাঁশের মাচার উপর দিয়ে সকলে যাতায়াত করেন। এলাকার মানুষ ওখানে একটি সেতু তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সেতু তৈরি হলে কম সময়ে জেলার সদর বা মহকুমা শহরে কিংবা স্কুল কলেজের যেতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা।

মাধবচন্দ্র দেবনাথ, হাতিশালা

ওই সেতু নির্মাণের জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে একবার ওই সেতু তৈরির প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েছিল। মাটি পরীক্ষার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সিপিএম সরকারের গড়িমসিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

•এলাকার অনেক গরিব মানুষ বিপিএল তালিকায় নাম না থাকায় খাদ্য সুরক্ষার কার্ড পাচ্ছেন না।

চঞ্চলা ওঝা, দীঘলকান্দি

২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী বিপিএল তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই তালিকায় অনেক যোগ্য মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে নতুন সমীক্ষা করে তাঁদের যাতে সুযোগ করে দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে পঞ্চায়েত দেখবে।

• পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি পড়লেও তারের সংযোগ হয়নি। কোথাও খুঁটি বা তার কিছুই আসেনি। পঞ্চায়েত কেন চেষ্টা করছে না?

বাহাদুর মণ্ডল, দীঘলকান্দি

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যে দেশের সব বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ করতে হবে। সেই হিসেবে কাজও চলছে জোরকদমে। কিছু এলাকায় কারও জমির উপর দিয়ে বিদ্যুৎ যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। সেগুলি সমাধান হলেই বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।

• প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অনেক গরিব মানুষ ঘর পায়নি। অথচ যাদের পাকা ঘর রয়েছে, ঘর পাওয়ার জন্য তাদের নাম তালিকায় রয়েছে। কী করে সেটা সম্ভব হল?

সরিয়ত খান, দীঘলকান্দি

বিপিএল তালিকা তৈরির সময় সমীক্ষায় কিছু ভুল রয়ে গিয়েছে। যারা দুঃস্থ বিপিএল তালিকায় তাদের অনেকের নাম নেই। নতুন করে নামের তালিকা তৈরি হলে ভবিষ্যতে তাদের দেওয়া সম্ভব হবে।

• বিপিএল তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও অনেক মহিলা বিধবা ভাতা পাননা। তাদের কারও কারও বয়স ৮০ পেরিয়ে গিয়েছে।

দীপালি দাস, দীঘলকান্দি

নিয়ম অনুযায়ী ৪০ থেকে ৮৯ বছরের বিধবারা এই ভাতা পাবেন। কিন্তু অনেকের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ায় আমরা দিতে পারিনি। এ বছর ৪৯ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। চেষ্টা করে তাঁদের মধ্যে ২৭ জনকে ভাতা দিতে পেরেছি। বাকি ২২ জনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement