jaggery

অমিল হয়েছে শিউলি, লাভ কম গুড় বেচেও

হোগলবেড়িযার শ্রীদাম বিশ্বাস জানান, বছর তিরিশ আগে তিনি এলাকার প্রায় দেড়শো খেজুর গাছ থেকে প্রতিদিন সকালে রস সংগ্ৰহ করতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৫০
Share:

—ফাইল চিত্র।

শীতের ঠান্ডা সকালে কলসি ভরা খেজুর রস আর শীতের মরসুমে নলেন গুড়ের পিঠে-পুলি বহু মানুষের প্রিয়। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় খেজুর রস সংগ্রহের জন্য শিউলিদের সংখ্যা কমছে। সঙ্গে কমছে ভাল মানের খেজুর গুড়।

Advertisement

জানা গিয়েছে, এলাকায় নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই কাজ থেকে বিরত থাকছেন। অন্য দিকে, খেজুর গাছের সংখ্যাও এলাকায় দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। আগে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাস থেকে খেজুর গাছ কাটার কাজ শুরু হয়ে যেত। আর এখন যে সমস্ত খেজুর গাছ রয়েছে সেগুলো আগাছায় ভরে গিয়েছে। রস সংগ্রহের জন্য আগের মতো শিউলিদের দেখা যাচ্ছে না। আগে যে শিউলিরা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্ৰহ করতেন এবং রস থেকে গুড় তৈরি করতেন তাঁদের অনেকেই এখন বৃদ্ধ হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের কেউ তেমন আগ্রহী নন এই কাজে।

হোগলবেড়িযার শ্রীদাম বিশ্বাস জানান, বছর তিরিশ আগে তিনি এলাকার প্রায় দেড়শো খেজুর গাছ থেকে প্রতিদিন সকালে রস সংগ্ৰহ করতেন। এখন বয়স হয়েছে। গাছে ওঠার ক্ষমতা হারিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ছেলে এই কাজ করলেও খুব সামান্য কয়েকটি গাছের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করেন।

Advertisement

তাঁর কথায়, “আশেপাশের গ্রামের অনেক খেজুর গাছের মালিকের সঙ্গে গাছ পিছু নির্দিষ্ট টাকা ও নলেন গুড় দেওয়ার শর্তে শীতের মরসুমে মাস দুয়েক এই কাজ করতাম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এতগুলো গাছে উঠে কলসি লাগানো ও ভোরবেলায় সেই কলসি নামানো খুব কষ্টের কাজ। অথচ ঠান্ডা যত বেশি হয় রস ও গুড়ের স্বাদ তত ভাল হয়।’’

তিনি জানান, হাড় হিম করা শীতের মধ্যে গাছে ওঠা খুব ঝুঁকির কাজ ছিল। তবুও পেটের তাগিদে টাকার জন্য এসব করতেই হত। এখন অন্য কাজে বেশি রোজগারের ফলে এই কাজ কেউ করছে না।

তেহট্টের বেতাইয়ের আর এক শিউলি জানান, এই কাজে পরিশ্রম বেশি অথচ রোজগার কম। তাই অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। বদলে কেউ মাঠে বা কেউ অন্য কাজ করছেন। নতুন করে কেউ আর এই কাজে যাচ্ছেন না। গাছ থেকে শুধু খেজুর রস সংগ্রহই নয়, প্রায় পনেরো লিটার রস ফুটিয়ে মাত্র এক কেজি গুড় তৈরি হয়। যার দাম সত্তর থেকে আশি টাকা। সেই রস ফোটাতে প্রচুর জ্বালানি লাগে। আগে আশেপাশের বন জঙ্গল, ঝোপঝাড় কেটে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলেও এখন সেই বন জঙ্গলও নেই। জ্বালানির এত খরচ করে তৈরি গুড় বেচে আর লাভ হচ্ছে না। যে জন্য খেজুর গাছ থাকলেও রস সংগ্রহের শিউলি মিলছে না।

করিমপুরের এক গুড় ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘আগে এলাকায় অনেক নলেন গুড় পাওয়া যেত। এখন এখানকার বেশির ভাগ গুড় মুর্শিদাবাদের কয়েকটি জায়গা থেকে আসে। চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ার জন্য গুড়ের দাম যেমন বেশি, তেমন গুড়ের মানও কমেছে।’’ তাঁর দাবি, গুড় তৈরির সময় চিনি দিয়ে নিম্ন মানের গুড় তৈরি হচ্ছে। ফলে, সুস্বাদু নলেন গুড়ের দাম অনেক বেশি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement