আবাস প্লাসের হাল দেখতে এসে নদিয়ার কয়েকটি গ্রামে ঘুরলেন কের্ন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। কিন্তু কোথাও তাঁদের কাছে ঘর না পাওয়ার অনুযোগ করতে দেখা গেল না প্রায় কাউকেই! বরং কাউকে-কাউকে বলতে শোনা গেল, “পাগল নাকি? ওঁরা ঘুরে চলে যাবেন। আমাদের তো থাকতে হবে এখানেই।” নাদুড়িয়ায় এক যুবক মহকুমাশাসকের গাড়ির সামনে একা দাঁড়িয়ে ঘর না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভের কথা জানালেও পরে তিনি বয়ান পাল্টে ফেলেন।
সোমবার রাতেই প্রতিনিধি দল কৃষ্ণনগরে চলে এসেছিল। মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দলের সদস্যেরা তালিকা হাতে গ্রাম ঘুরতে বেরোন। সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তা ও এলাকার মোটিভেটিরেরা। কৃষ্ণনগরের কাছেই চক দিগনগর পঞ্চায়েতের নাদুড়িয়া গ্রামে নাম অনুমোদিত হয়েছে এবং নাম বাদ গিয়েছে এমন একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে যান তাঁরা। আগের তালিকায় নাম থাকা বা টাকা পাওয়া লোকজনের বাড়িতেও যান। নাদুড়িয়া ছাড়াও দিগনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিশালা গ্রামে গিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘোরেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
স্থানীয় কিছু লোকজনকে এই সময়ে প্রতিনিধিদের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা কিন্তু তাঁদের কাছে কিছু না বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁরা ক্ষোভের কথা জানাতে থাকেন। এঁদের এক জন, নাদুড়িয়া গ্রামের বিধান ঘোষ আক্ষেপ করেন, “যাঁরা ঘর পাওয়ার তাঁরা পাচ্ছেন না, আবার যাঁদের পাকা বাড়ি তালিকায় তাঁদের নাম আছে। এই প্রতিনিধি দল সেই সমস্ত বাড়িতে কিন্তু যাচ্ছে না।” প্রতিনিধি দলের কাছে জানাচ্ছেন না? বিধান বলেন, “কী করে জানাব? গরিব মানুষ, কোনও মতে বেঁচে আছি। এ সবের মধ্যে ঢুকলে আর রক্ষা থাকবে না। ওরা এলাকাছাড়া করে ছাড়বে।” ওরা কারা? জটলা থেকে মাঝবয়সি এক মহিলা বলে ওঠেন, “আমাদের কাছে জানতে চাইছেন কেন? যারা তালিকা তৈরি করেছে তাদের কাছে জানতে চান। প্রাণে মারতে চান নাকি?”
পথচলতি প্রতিনিধিদের দিকে জটলা থেকে নানা অনুযোগ উড়ে এসেছে। তবে সে সব তাঁদের কানে পৌঁছেছে কি না সন্দেহ। গ্রামবাসীদের একাংশের ধারণা, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসে বিশেষ লাভ হয়নি। নাদুড়িয়া গ্রামের ভরত ঘোষের মতে, “এত টাকার তেল পুড়িয়ে যে ওঁরা এলেন, তাতে লাভ হল না। কারণ তৃণমূলের লোকজনকে নিয়ে ওঁরা ঘুরলেন। ওই নেতারা যে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছএন, সেখানেই গেলেন। কত গরিব মানুষের তালিকায় নাম নেই, তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন না।” যদিও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, কার কার বাড়িতে যাবেন সেটা তাঁরাই ঠিক করছেন। চোখ-কান খোলা রেখেই তাঁরা এলাকায় ঘুরেছেন। যা বোঝার তা ঠিকই বুঝে নিচ্ছেন। এ দিন হঠাৎই প্রতিনিধিদের সঙ্গে থাকা কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেনের গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান বছর পঁচিশের যুবক ভাষ্কর ঘোষ। তিনি বলতে থাকেন, “আমার এক প্রতিবেশীর নামে টাকা এলেও আমি টাকা পাইনি। ভাঙা ঘরেই থাকতে হচ্ছে।” নিরাপত্তারক্ষী এসে তাঁকে সরিয়ে দেয়। পরে অবশ্য ভাস্কর ফোনে বলেন, “না জেনে ভুল কথা বলে ফেলেছি। এক নামে দু’জন আছেন আমাদের গ্রামে। যার টাকা পাওয়ার কথা, তিনি টাকা পেয়েছেন।” কারও হুমকিতে কি বয়ান পাল্টে ফেললেন তিনি? টেলিফোনের অপর প্রান্তে চুপ করে থাকেন ভাস্কর।
শাসক দলের অদৃশ্য চোখরাঙানিই তবে বোবা করে রেখেছে সব মুখ? নদিয়া জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাশিস রায়ের দাবি, “এই ধরনের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।”