আবাস বিতর্ক সামলাতে পথে তৃণমূল। প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আবাস যোজনার দুর্নীতির অভিযোগ যে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে তা কার্যত স্পষ্ট। বুধবার থেকে শুরু হওয়া তৃণমূলের ‘অঞ্চলে এক দিন’ কর্মসূচিতে গিয়ে প্রাক্তন সংসদ তথা তৃণমূলের এসসি সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তাপস মণ্ডল কর্মীদের কাছে সেই চ্যালেঞ্জের কথাই তুলে ধরলেন। টেটের পর আবাস— জোড়া ফলায় বিদ্ধ রাজ্যের শাসক দল মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ ও অসুবিধার সুরাহার দিশা দেওয়ার এই কর্মসূচি নিয়েছে।
এদিন পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকায় যান তৃণমূলের পাঁচ জেলা নেতা। যার মধ্যে তিনটি পঞ্চায়েত নদিয়ার দক্ষিণে, যেখানে গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিজেপির কাছে লেজে-গোবরে হয়েছে তৃণমূল। এ দিন সকালেই বাদকুল্লা ১ পঞ্চায়েতে চলে যান দলের রানাঘাট সংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান প্রমথরঞ্জন বসু। বাবলারি পঞ্চায়েতে জেলা পরিষদ সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু, বৈদ্যপুর ২ পঞ্চায়েতে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, ভাণ্ডারখোলা পঞ্চায়েতে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং কৃষ্ণগঞ্জের জয়ঘাটা পঞ্চায়েত এসসি সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ তাপস মণ্ডল সারা দিন কাটিয়েছেন।
বাদকুল্লা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে প্রমথরঞ্জন বিভিন্ন বাড়ির লোকজন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন কি না তা জানতে চান। আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহায়তা করছেন কিনা তারও খোঁজ নেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়েই প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রমথরঞ্জন তাঁদের জানান, কোথায় তী ভাবে আবেদন করতে হবে।
নবদ্বীপ ব্লকের বাবলারিতে রিক্তা কুণ্ডু যান কস্তুরবা গান্ধীর নামাঙ্কিত মেয়েদের ছাত্রাবাসে। কর্তৃপক্ষ নানা দাবি-দাওয়া জানান। সোলার প্যানেল দিয়ে আলোর ব্যবস্থা, কন্যাশ্রী পার্ক যার অন্যতম। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সুবিধা-অসুবিধার খোঁজখবরও নেন তিনি। রানাঘাট ২ ব্লকের বৈদ্যপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে দিয়ে সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও নানা বাড়িতে গিয়ে কথাও বলেন। সরকারি দফতরে গিয়েও খোঁজখবর নেন।
কৃষ্ণগঞ্জের জয়ঘাটা পঞ্চায়েতে গিয়ে প্রাক্তন সাংসদ তাপস মণ্ডল নেতা-কর্মীদের বলেন, আবাস যোজনা নিয়ে যে সব দুর্নীতি হয়েছে তার মোকাবিলা করাই এ বার পঞ্চায়েত ভোটে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের ‘কালো দিন’ ভুলে মানুষের মন জয়ের বার্তাও দেন তিনি। এ দিন আবাস যোজনা নিয়েও অনেকে তাঁর কাছে অভিযোগ জানান। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে কোথাও কোথাও। এক জন অভিযোগ করেন, সাংসদ বা সরকারের দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্স চাইলে পাওয়া যায় না। মোটা টাকায় তা বাইরে ভাড়া খাটে। সে সব নিয়ে তিনি কর্মীদের সতর্ক করেন।
বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে এখন মানুষের মন ভোলানোর চেষ্টা হচ্ছে। এতে ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে না। মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতি দেখেছে।” রিক্তা কুণ্ডু পাল্টা বলেন, “মানুষের কাছে যাওয়া আমাদের নতুন কিছু নয়, সারা বছর আমাদের কর্মীরাই মানুষের পাশে থেকে কাজ করেন। বিরোধীদের তো শুধু ভোটের সময় এলেই ময়দানে দেখা যায়।”