Bank robbery

ছুটিতে ভল্ট কেটে লুটের চেষ্টা ব্যাঙ্কে

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, শনি ও রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার সুযোগেই চোরেরা হানা দেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:২৪
Share:

ব্যাঙ্কের দরজা কেটে দুষ্কৃতীরা ঢোকে বলে অভিযোগ। ধুবুলিয়ায় সোমবার। নিজস্ব চিত্র

রাতে দরজা কেটে ঢুকে ভল্ট লুটের চেষ্টা হল ধুবুলিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। তবে শেষ পর্যন্ত ভল্ট রক্ষা পেয়েছে এবং চোরেরা কোনও টাকা নিয়ে যেতে পারেনি বলেই পুলিশের দাবি। তবে ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্যাস কাটার দিয়ে ভল্ট কাটতে গিয়ে দুষ্কৃতীরা পাল্লার লোহা গলিয়ে ফেলায় সেটি সিল হয়ে গিয়েছে। তাই চাবি দিয়ে আর ভল্ট খোলা যাচ্ছে না। তা না খোলা পর্যন্ত টাকা খোয়া গিয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে নি।

Advertisement

বছর পাঁচেক আগেও ধুবুলিয়ার এই ব্যাঙ্কেই সিসি ক্যামেরার তার ছিঁড়ে লুটপাট চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, শনি ও রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার সুযোগেই চোরেরা হানা দেয়। পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে পিছনের দরজার কোলাপসিবল গেটের তালা কাটার পরে তারা শাটারও কেটে ফেলে। তার পর দরজার লোহার পাত কেটে ভিতরে ঢুকে সিসি ক্যামেরার তার কেটে দেয়। সেই সঙ্গে কেটে দেয় কম্পিউটারে কাজ করার জন্য ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের তার এবং ভল্টে হাত দিলেই বাইরে যে সাইরেন বেজে ওঠার কথা, সেটির তারও। এর পরে ভল্টের ঘরের শাটার কেটে ভিতরে ঢুকে গ্যাস কাটার দিয়ে তারা পাল্লা কাটার চেষ্টা করে। মোটা ইস্পাতের ওই পাত গ্যাস কাটার দিয়ে কাটা কঠিন। সেটা তারা কাটতে পারেনি, কিন্তু ভল্টের লোহার পাল্লা কিছুটা গলিয়ে ফেলেছে। ব্যাঙ্কের ভিতর থেকে পুলিশ তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার করেছে। তার মধ্যে একটি ব্যাঙ্কের ক্যান্টিনের আর দু’টি চোরেরা বাইরে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। তার মধ্যে একটি পাঁচ লিটারের ছোট সিলিন্ডার।

জেলা পুলিশের এক তদন্তকারী অফিসারের ধারণা, সম্ভবত তিনটি সিলিন্ডারের গ্যাসই ফুরিয়ে যাওয়ায় দুষ্কৃতীরা ভল্ট কাটতে পারেনি। ব্যাঙ্কের এক কর্তার কথায়, “ভল্ট কাটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে ভল্ট না খোলা পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না যে টাকা খোয়া গিয়েছে কিনা।” তবে দুষ্কৃতীরা একটি বড় নাইলনের আর দু’টি কাপড়ের ব্যাগ ফেলে গিয়েছে। সম্ভবত তারা সেগুলি টাকা ভরার জন্য নিয়ে এসেছিল। একটি মোবাইল চার্জারও তারা ফেলে গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশের ধারণা, কোনও পেশাদার দল এই ঘটনায়। যে ভাবে একের পর এক তার কাটা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহল। শুধু তা-ই নয়, ভিতরে এত টেবিল থাকতে শুধু মাত্র হেড ক্যাশিয়ারের টেবিলের ড্রয়ারই তরা ওলটপালট করেছে, কারণ তাঁর কাছেই সাধারণত ভল্টের একটি চাবি থাকার কথা। পুলিশের এক তদন্তকারীদের কথায়, “ভিতরের কারও জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। বছর পাঁচেক আগে যারা এই ব্যাঙ্কে হানা দিয়েছিল, তারাও এতে জড়িত থাকতে পারে।”

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এই ব্যাঙ্কের পাশেই মোটরবাইকের শো-রুম। তার সামনেই দু’টি সিসি ক্যামেরা আছে। ধুবুলিয়া বাজার-সহ ওই এলাকায় ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। পুলিশ শুক্রবার রাত থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত বিশেষ করে নেতাজি পার্ক ও বটতলা এলাকার ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে। যদিও প্রাথমিক ভাবে তেমন কোনও গাড়ির যাতায়াত দেখা যায়নি বলেই তদন্তকারীদের দাবি। ধুবুলিয়া থানা থেকে মেরে-কেটে আধ কিলোমিটার দূরে ওই ব্যাঙ্ক। সেখানে এতক্ষণ ধরে লুটের চেষ্টা চালিয়ে গেল দুষ্কৃতিরা আর টহলদার পুলিশের সন্দেহজনক কিছু নজরে পড়ল না?

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার রামচন্দ্র মাহান্ত বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে, তাই এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করব না।” কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথনিক ভাবে আমরা অপরাধীদের সম্পর্কে কিছু সূত্রও পেয়েছি। আশা করছি, দ্রুত এই ঘটনার কিনারা হয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement