প্রতিমা নিরঞ্জনের মুহূর্ত। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কৃষ্ণনগরে পুজোর ভাসান ঘিরে অশান্তি অব্যাহত।
শনিবার রাতে কালীপুজোর ভাসানের শোভাযাত্রায় অশান্তি ঠেকাতে একাধিক জায়গায় লাঠি চালাতে হল পুলিশকে। আর সেই অশান্তির মধ্যে বিসর্জন প্রক্রিয়ায় এতটাই দেরি হল যে শেষ প্রতিমা বিসর্জন পর্ব শেষ হতে পরদিন রবিবার বেলা দশটা গড়িয়ে গেল।
শুধু তাই নয়, অশান্তি এড়াতে পুজো কমিটি গুলির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পুলিশের পক্ষ থেকে যে সমস্ত পদক্ষেপ করা হয়েছিল তা অমান্য করতে দেখা গেল বেশিরভাগ পুজো কমিটিকে। দুর্গাপুজোর পর কালীপুজোর ভাসানের শোভাযাত্রায়ও একই ভাবে গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটায় সামনে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসান নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের কপালে এখন থেকেই দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে।
কৃষ্ণনগর শহরে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা ঘিরে অশান্তি নতুন নয়। আগে জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রায় অশান্তি থেকে রক্তপাত এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। পর সেই অশান্তি দুর্গা ও কালীপুজোর ভাসানেও ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি কালীপুজোর ভাসানের শোভাযাত্রায় একাধিক খুনের ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। এমনকি বছর দু’য়েক আগে শোভাযাত্রার ভিতরে জেনারেটর বহনকারী এক ভ্যানচালককে পিটিয়ে খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে। কেন প্রশাসন এ সব বন্ধ করতে পারছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী। এরই সঙ্গে অশান্তি বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে শাসক দলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
দিন কয়েক আগে দুর্গা প্রতিমার শোভাযাত্রায় দুই বারোয়ারির মধ্যে গোলমালে গুরুতর জখম হয়েছিলেন তিনজন বহিরাগত দর্শনার্থী। সেই ঘটনার পর পুলিশের তরফে কালীপুজোর শোভাযাত্রায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়। প্রায় চার গুন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়। তাতেও অবস্থার পরিবর্তন হল না। এদিন এ ভি স্কুলে মোড়ে একটি পুজো কমিটির সদস্যরা পুলিশ ও দর্শনার্থীদের লক্ষ্য করে শব্দ বাজি ছুড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ ভি স্কুলের মোড় থেকে আমিনবাজার এলাকার মধ্যে দুটি পুজো কমিটির প্রতিমা মুখোমুখি হতেই ফের গোলমান শুরু হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
প্রথম থেকেই বেশিরভাগ বারোয়ারিকেই দেখা গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতা করতে। অশান্তি এড়াতে এবার গাড়িতে করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া বারোয়ারিগুলির জন্য ভিন্ন রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ পুজো কমিটি তা না মেনে পুরনো রাস্তা ধরেই শোভাযাত্রা করে। শুধু তাই নয়, এ ভি স্কুলের মোড় থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত পুলিশ প্রতিমার সঙ্গে একশো জনের বেশি না রাখার অনুরোধ করেছিল। প্রথম দিকে কেউ কেউ তা মানলেও বেলা যত গড়িয়েছে, ততই তা অগ্রাহ্য করতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন পুজো কমিটিকে। ফলে অশান্তি ঠেকাতে পুলিশের কোনএ পরিকল্পনাই এদিন কাজ করেনি। কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার আইসি অরবিন্দ বিশ্বাস অবশ্য দাবি করেন, “বিসর্জন শান্তিপূর্ণ ভাবে করার জন্য আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। তবে দু’একটা ছোট ঘটনা বাদে পুরোটাই শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে।”