ঝাড়খণ্ডের নিমশহরের মেলার মাঠ ফরাক্কা এলাকাতেও বেশ জনপ্রিয়। জাতীয় সড়কের পাশেই গঙ্গাপাড়ের বিশাল এলাকা জুড়ে পৌষ সংক্রান্তির সে মেলায় উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। অন্য সময় ধুধু প্রান্তর। সচরাচর তখন পা পড়ে না কারও। সেই মেলা-হীন মাঠকেই দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার ‘সেফ’ জায়গা হিসেবে বেছে নেয় বলে খবর পেয়েছিল পুলিশ। সে বারও তেমনই নিভৃত আসর বসেছিল অস্ত্র কারবারিদের।
চড়া রোদে ভর দুপুরে মাঠের মধ্যে বাইক নিয়ে অপেক্ষাই সন্দেহ জাগিয়েছিল পুলিশের। আর সে সন্দেহেই কিস্তিমাত করেছিল সে দিন ফরাক্কা থানার পুলিশ।
ভরদুপুরে সেই ফাঁকা মাঠেই বাইকসহ পুলিশের হাতে বমাল পাকড়াও হয়েছিল আলমগির শেখ নামে বছর উনিশের এক তরুণ। তার বাইকের ডিকি খুলে মিলেছিল ৭টি নাইন এমএম পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন ও ৪৯ রাউন্ড তাজা কার্তুজ। পুলিশের চোখ এড়িয়ে আশপাশেই থাকা আলমগিরের অন্য দুই সঙ্গী ততক্ষণে অবশ্য হাওয়া। ধৃত আলমগির ও পলাতক দুই সঙ্গী সকলেরই বাড়ি ছিল মালদহের বৈষ্ণবনগরের চকদেওনাপুর গ্রামে। জাল টাকার রুট হিসেবে যার পরিচিতি দেশ জুড়ে।
আগ্নেয়াস্ত্রের হাতবদলের খবরটা ছিল পাকা। কিন্তু সেটা যে হবে গঙ্গার পাড়ে মেলার মাঠেই, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিল না পুলিশ। ২৪ জুলাই মঙ্গলবার, দুপুর থেকেই পুলিশের নজরে ছিল নিউ ফরাক্কা বাসস্ট্যান্ডের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের আশপাশে। সাদা পোশাকে ফরাক্কা থানার আইসি উদয় শঙ্কর ঘোষ নিজে, সঙ্গে আরও পাঁচ জনের দল। কিন্তু পুলিশের নজর এড়িয়ে জাতীয় সড়ক ছেড়ে বাইকে তিন দুষ্কৃতীই কখন যেন ঢুকে পড়েছিল বেনিয়াগ্রাম যাওয়ার গ্রামীণ সড়ক পেরিয়ে মেলার মাঠে ।
হঠাৎই আইসি’র নজরে পরে ভরদুপুরে বাইক নিয়ে ফাঁকা মাঠে দাঁড়িয়ে এক তরুণ। পুলিশের সন্দেহের নজর যায় তার দিকে। পুলিশের গাড়ি দূরে, নজরের বাইরে। বিভিন্ন দিক থেকে মাঠে ঢুকে পড়েন ৬ জনই। কিছু বোঝার আগেই তাদের হাতের নাগালে সে। তারপরেই শুরু হয় তল্লাশি। বাইকের ডিকির মধ্যে একটি ময়লা বাজারের পুরোনো ব্যাগ। ব্যাগ খুলতেই চোখ কপালে ওঠে পুলিশের। ভিতরে পরপর সাজানো পিস্তল, ম্যাগাজিন আর তাজা গুলি। সবই লোকাল মেড।
ধৃত আলমগীর আগ্নেয়াস্ত্রগুলি নিয়ে এসেছিল নিজেই বৈষ্ণবনগর থেকে গঙ্গা পেরিয়ে। তা কেনার জন্য বীরভূমের বোলপুর থেকে এসেছিল এক জন। ফরাক্কার জমজমাট জাতীয় সড়কে লোকজনের ভিড় দেখেই হাতবদলের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল নিরিবিলি গঙ্গা পাড়ের ফরাক্কার মেলার মাঠকে। কিন্তু পুলিশি অভিযান দেখে ধৃতের দুই সঙ্গী ও ক্রেতা গা ঢাকা দেয়। আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলছেন, “সে দিন কিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ তরুণকে ধরেছিলাম ভাবতে নিজেরও অবাক লাগে। যাতে পালাতে না পারে তার জন্য চারিদিক থেকে তাকে ঘিরে মাঠে ঢোকার সেই দুপুরটা একেবারে হিন্দি ছবির মতো!’’