কৃষ্ণনগর ছেড়ে বাড়ি চলল পিঙ্কি

মায়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করে মদ্যপ বাবা তাকে দিল্লি পাঠিয়ে দিয়েছিল পরিচারিকার কাজ করতে। মুসলিম বলে যদি কাজ না জোটে, এই ভয়ে নতুন নাম হয় পিঙ্কি দাম। মারধর সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে আসে বছর পনেরোর মেয়ো। দিল্লি পুলিশ তাকে রাজ্যে ফেরত পাঠায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৯
Share:

মায়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করে মদ্যপ বাবা তাকে দিল্লি পাঠিয়ে দিয়েছিল পরিচারিকার কাজ করতে।

Advertisement

মুসলিম বলে যদি কাজ না জোটে, এই ভয়ে নতুন নাম হয় পিঙ্কি দাম।

মারধর সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে আসে বছর পনেরোর মেয়ো। দিল্লি পুলিশ তাকে রাজ্যে ফেরত পাঠায়। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরের চাপড়ার বদলে নদিয়ায়। সম্ভবত ভুল করেই। চাইল্ড লাইনের কর্মীদের হাত ধরে বৃহস্পতিবার বাড়ি চলল সেই মেয়ে, নাজিমা খাতুন।

Advertisement

তার আগে, নদিয়া জেলাশাসকের সামনে বসে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল মেয়েটা। খুশিতে আর বাড়ি ফিরে কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, সেই ভয়ে। যা বুঝে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত নিজের ব্যক্তিগত মেবাইল নম্বর তাকে দিয়ে বললে, “কোনও সমস্যা হলেই আমায় ফোন কোরো। দেখছি, তোমার জন্য কোনও সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায় কি না।”

কী করে ‘পিঙ্কি’ হয়ে নাজিমা চলে গিয়েছিল দিল্লিতে? প্রশাসন সূত্রের খবর, নাজিমার বাড়ি চোপড়া থানার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ভুটিচেরি হাটখোলা নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তারা ছয় ভাইবোন। বাবা মঙ্গল মণ্ডল রিকশা চালান। মা মোমিনা বিবি বাড়ির কাছে চা বাগানে কাজ করেন। সংসারে প্রচণ্ড অভাব। চা বাগানে কাজ করত নাজিমাও। বছর দুয়েক আগে তার বাবা বাড়ির সকলের আপত্তি উড়িয়ে প্রতিবেশী এক কাকুর সঙ্গে দিল্লিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বছর চোদ্দোর নাজিমাকে। সে দিন খুব কেঁদেছিল মা আর মেয়ে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।

নাজিমার মনে পড়ে, প্রথমে সে পিঙ্কি নাম নিয়ে এক জনের বাড়িতে বেশ কিছু দিন পরিচারিকার কাজ করেছিল। সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় একটি অফিসে। সেখানে তাকে মারধর করা হত। এক রাতে শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে সে পালায়। রাস্তায় পুলিশ দেখে সব খুলে বলে। শিশু কল্যাণ সমিতির (সিডব্লিউসি) মাধ্যমে দিল্লি পুলিশ তাকে কৃষ্ণনগরের সরকারি হোমে পাঠায়। হঠাৎ কৃষ্ণনগর কেন?

শিশু কল্যাণ সমিতির ধারণা, চাপড়ার সঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের সঙ্গে চোপড়াকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছিল। চাপড়াও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ও সেখানেও হাটখোলা বলে জায়গা আছে। তার ফলেই এই ভুল।

কৃষ্ণনগরেও এসেও কিন্তু আসল নাম বলেনি পিঙ্কি। থেকে-থেকেই খুব কান্নাকাটি করত। জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্য অনিন্দিতা ঘোষ বলেন, “ও বারবার বলত, শিলিগুড়ি স্টেশনে নিয়ে গেলেই বাড়ি খুঁজে বের করতে পারবে। সপ্তাহখানেক আগে ও প্রথম চোপড়া থানা আর হাটখোলা গ্রামের নাম বলে। তার পরেই চোপড়া থানার মাধ্যমে ওর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করি।” কিন্তু বাড়ি যে কেউ তাকে নিতে এত দূর আসবে, রাহা খরচ জোগাবে কে? বাধ্য হয়ে জেলাশাসক নাজিমাকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেন। নাজিমাও বলে, “মায়ের কাছে যাব।” সেই মতো চাইল্ড লাইনের ‘দিদি’ সেলিমা খাতুনের সঙ্গে রওনা দেয় বাড়ির দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement