আঁতিপাঁতি করে নথি খুঁজছেন দিলীপ

দিলীপবাবুর কথায়, ১৯৭০ সালের আগেই আমার পরিবার এ দেশে আসে। সেই সময়ের কোনও প্রমাণ তো দেখাতে পারব না।’’

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বছর বাহান্নর দিলীপচন্দ্র দাস দিন কয়েক ধরেই ঘরের মধ্যে আঁতিপাঁতি করে খুঁজছেন নথিটা। যদি কোনও ভাবে সাতের দশকের আগে ফুলিয়ায় এসে বসবাস করার প্রমাণপত্রটা কোনও ভাবে পাওয়া যায়। তাঁর গোটা পরিবারকেই চরম উদ্বেগ গ্রাস করেছে। এনআরসি-র আবহে ভিটেমাটি হারানোর উদ্বেগ।

Advertisement

১৯৭২ সাল নাগাদ তাঁকে ফুলিয়ার এক প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর বাবা। পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশ ছেড়ে এ দেশে আসা অবশ্য তারও আগে। এ দেশে এসে লোকের বাড়ি থেকে তাঁতশ্রমিকের কাজ শুরু করেন তাঁর বাবা, দাদা। ১৯৮২ সাল নাগাদ ফুলিয়ার তালতলা এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেন। সেই জমি রেজিস্ট্রি হয় অবশ্য তারও বেশ কয়েক বছর পরে। পেশায় তাঁত শ্রমিক দিলীপবাবুর বাড়িতে আছেন দুই দাদা, স্ত্রী, ছেলে। দিলীপবাবু বলেন, “জমি তো কিনেছি এ দেশে আসার অনেক পরে। তার আগের কাগজপত্র যদি দেখতে চায় তা কোথায় পাব?” তার কথায়, ১৯৭০ সালের আগেই আমার পরিবার এ দেশে আসে। সেই সময়ের কোনও প্রমাণ তো দেখাতে পারব না।’’

তালতলা এলাকারই বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বসাকের বাবা-কাকারা এ দেশে চলে আসেন ১৯৭০ সালে। তার আগেই এসেছেন জ্যাঠা। তাঁর বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন বিশ্বজিতেরা। পেশায় তাঁতশ্রমিক বিশ্বজিতের অবশ্য স্কুলে ভর্তির কাগজ নেই। ১৯৭৬ সালে তালতলা এলাকায় জমি কেনেন। সেই কাগজই সম্বল এখন। তাঁদের সকলেরই ভোটার কার্ড, আধার, রেশন কার্ড আছে। তিনি বলেন, “এখানে আমার বাবা যে বছরেই আসুক না কেন তার কোনও প্রমাণ নেই। যা কাগজ আছে সব অনেক পরের। আমাদের জন্ম এ দেশেই। কিন্ত সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে কিনা কে জানে। দুশ্চিন্তার মধ্যেই আছি।” স্বাধীনতার আগেই স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশ পাবনা থেকে এ দেশে চলে আসেন ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েতের স্পান পাইপপাড়ার রাজুবালা সরকার। প্রথমে বাগআঁচড়ার লক্ষ্মীনাথপুর, তার পর ফুলিয়ার কৃষিপল্লি ও পরে স্পান পাইপপাড়ায় বাস করা শুরু। স্বামী ঋষিপদ সরকার ছিলেন দিনমজুর। স্বামী মারা গেছেন বছর চল্লিশ আগে। তিনি বলেন, “এ দেশের যাবতীয় কাগজপত্র সবই আছে। এখন বার করে দেবে বললেই কি আর হয় নাকি!” এই উদ্বেগের চিত্র কমবেশি এলাকার অনেক বাসিন্দার মধ্যেই রয়েছে। অনেকেই ছুটেছেন ভোটার কার্ড আপডেট করতে আবার কেউ ব্যস্ত নিজেদের আধার বা অন্য পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনের জন্য।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement