প্রতীকী ছবি।
সাইবার ক্রাইম নিয়ে পুলিশের তরফে সচেতন মূলক প্রচারের পরেও প্রতারকদের ফাঁদে পড়ছেন মানুষ। কল্যাণী সাইবার ক্রাইম থানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বর মাসে রানাঘাট পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে মোট ৪৩ জন প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই শহরাঞ্চলের মানুষ এবং পড়াশোনা জানা। এঁদের কারও কাছে ফোন এসেছে ব্যাঙ্ক ঋণ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে। কারও কাছে ফোন এসেছে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা নিয়ে। আবার কারও কাছে ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবা বন্ধ করা নিয়েও ফোন এসেছে। এঁরা সকলেই প্রতারিত হয়েছেন বিভিন্ন ভাবে।
জানা গিয়েছে, ফোনের অপর প্রান্ত থেকে প্রতারকেরা কথার জালে ফাঁসাচ্ছে মানুষকে। কোনও ব্যক্তি হয়তো বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন। অথচ, তাঁর কাছে ফোন করে বলা হচ্ছে— বিল পরিশোধ না করলে রাত ন’টার মধ্যে সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা শুনেই প্রতারকদের পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করছেন মানুষটি। ফোনে ওটিপি এলে সেই ওটিপি শেয়ারও করে দিচ্ছেন। নিমেষের মধ্যে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে।
অথচ, বিদ্যুৎ অফিসের কর্তারা বলছেন, ‘‘বিল বাকি থাকলে উপভোক্তার বাড়িতে নোটিস পাঠানো হয়। সেখানে কত টাকা বিল বাকি আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে বলা হয়। এই ধরনের কোনও ফোন করা হয় না।’’
ব্যাঙ্ক ঋণ পাইয়ে দেবে বলেও প্রতারকেরা ফোন করছে। তার পর ধাপে ধাপে হাজার হাজার টাকা নিয়ে নিচ্ছে। পরে ঋণ না পেয়ে মানুষ বুঝতে পারছেন— তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। পাশাপাশি, ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ফোনে লিঙ্ক পাঠিয়েও প্রতারণা করা চলছে। সম্প্রতি প্রতারকেরা বিভিন্ন ধরনের রিমোর্ট অ্যাক্সেস অ্যাপ, যেমন কুইক সাপোর্টের মতো অ্যাপের লিঙ্ক ফোনে পাঠাচ্ছে। সেই লিঙ্কে ক্লিক করলে প্রতারকেরাই সংশ্লিষ্ট ফোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। এর পর খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে।
কয়েক দিন আগেই অনিতা রাও নামে এক মহিলার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে বলে কল্যাণী সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
তাঁর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, প্রতারকেরা ভুয়ো নথিপত্র দিয়ে অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ওই একই নম্বরে আর একটি সিম তোলে। সেই নম্বরের মাধ্যমেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়। ওই সময় অনিতা রাও-এর নম্বরে টাওয়ার বন্ধ ছিল। তবে মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নাম করে প্রতারকেরা আগে যে ভাবে প্রতারণা করত, সেই ধরনের অভিযোগ এখন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা যাচ্ছে।
কল্যাণী সাইবার থানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, কারও কারও গায়েব হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে যে অ্যাকাউন্টে প্রতারকেরা টাকাটা নিচ্ছে, সেই অ্যাকাউন্টে যে টাকা থাকছে, সেইটুকুই। সেটাও খুব কম সংখ্যক। প্রতারকদের বেশির ভাগের ফোনের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া ও রাজস্থানে। এই সাইবার ক্রাইম রুখতে বিভিন্ন এলাকায়, কোনও কোনও মেলায় সচেতন মূলক প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ।
রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কন্নন বলেন, “বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সাইবার ক্রাইম নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে।”