র্যাম্পে ঘুরছে গরু। নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহ দু’য়েক আগের ঘটনা। তুলসী দাস নামে মাঝ বয়সী এক মহিলার আচমকা বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। সঙ্গে ছেলে গোপীনাথ। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, ‘এখনই ভর্তি করাতে হবে আইসিসিইউ-য়ে’।
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল সবই। বিপত্তি বাধে দোতলায় মা’কে তোলা নিয়ে। গোপীনাথ জানান, একা তাঁর পক্ষে দোতলায় তোলা সম্ভব ছিল না। দরকার ছিল হুইল চেয়ারের। কোনওক্রমে তা মিললেও দোতলায় তুলবেন কি করে! কারণ হাসপাতালের র্যাম্প জুড়ে গরু-ছাগলের পরিপাটি সংসার। মা’কে নিয়ে পাঁজকোলা করে দোতলায় তোলা ছাড়া আর কোনও পথ কোলা ছিল না তাঁর।
হাসপাতালের এটাই চেনা চেহারা। বছর দু’য়েক আগেই জেলার মেডিক্যাল হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের সময় র্যাম্প ছিল বন্ধ। রোগীদের নীচে নামিয়ে আনতে হ্যাপা কম পোহাতে হয়নি। পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কান্দি হাসপাতালে অবশ্য এটাই দস্তুর। এখানে প্রায় কোনও দিনই র্যাম্পের পথ খোলা থাকে না।
অথচ হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের অগ্নিকাণ্ডের পরে ঢেলে সাজা হয়েছিল কান্দি হাসপাতালের র্যাম্প। কিন্তু দিন যত এগিয়েছে ততোই তা হয়ে উঠেছে, রোগীর পরিবারের কাপড়জামা মেলার জায়গা। গরু-ছাগলের বিশ্রামস্থল। অথচ এই র্যাম্পের সামনেই হাসপাতালের অন্যতম জরুরি ওয়ার্ড সিসিইউ। রোগীর আত্মীয়দের নজর এড়ালেই ওই র্যাম্প দিয়ে গরু আবার ওই ওয়ার্ডেও চলে যেতে পারে।
প্রায় সাড়ে তিনশো শয্যার ওই মহকুমা হাসপাতালে কান্দি শহর ছাড়াও কান্দি মহকুমার পাঁচটি ব্লকের কয়েক লক্ষ বাসিন্দা নির্ভরশীল হাসপাতালের ওপর। বীরভূম ও বর্ধমান জেলার একটি অংশের বাসিন্দারা ওই হাসপাতালে রোগী দেখাতে ভিড় করেন। কিন্তু, দোতলার ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে গেলে, পাঁজাকোলা, কিংবা সিঁড়ি বাঙাই ভরসা। রাজু শেখ তাঁর বন্ধুর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। বলছেন, “বন্ধুর স্ত্রী কে হাসপাতালে নিয়ে এসে জরুরি বিভাগ থেকে দোতলার ওয়ার্ডে যেতে আগে গরু তাড়াতে হল এক ঘণ্টা ধরে।’’
এমনটা মাঝেমধ্যেই হয় বলে অভিযোগ। যদিও হাসপাতাল কর্মীরা বলছেন, ‘‘কই সারাক্ষণ তো গরু থাকে না। সকালের দিকে একটু আসে
আর হাসপাতালের সুপার মহেন্দ্রনাথ মাণ্ডি বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে গরু চড়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু র্যাম্পের মধ্যে গরু
উঠে যায়, এমন তো শুনিনি। নজর রাখতে হবে।’’