উদ্ধার হওয়া পাসপোর্ট। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
কয়েকটা অচেনা মুখকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশে খবর দিয়েছিলেন এলাকার লোকজন। কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ল।
অচেনা মুখেরা কোথা থেকে এল, তার খোঁজখবর করতে গিয়ে আস্ত একটা জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট বের করার চক্রেরই হদিস পেয়ে গিয়েছে পুলিশ। যারা কি না জাল নথি দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে এ দেশ ও বাংলাদেশের লোকজনকে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজে পাঠানোর ধান্দা করে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় চক্রের দুই পান্ডা ও পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করছে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে ৩৩টি পাসপোর্ট, একটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, বেশ কিছু নকল ভোটার কার্ড, নকল রেশন কার্ড, ব্যাঙ্কের নকল পাসবই আটক করা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের কলকাতার আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতরের তরফেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ধৃতদের বহরুমপুর আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ভোটের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিএসএফের পাশাপাশি পুলিশও অনুপ্রবেশকারী ধরতে নেমেছে। উত্তর ২৪ পরগনায় সাফল্যও মিলেছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ভারতীয় নাগরিক সাজিয়ে বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে কাজ করতে পাঠানার জন্য পাসপোর্ট পিছু আড়াই লক্ষ টাকা করে নেয় বলে জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে। এর সঙ্গে সরকারি দফতরের কোনও ব্যক্তির যুক্ত থাকার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।” এর আগে কত জন এই চক্রের মাধ্যমে বিদেশে গিয়েছেন, কাজ দেওয়া ছাড়াও এদের কোনও জঙ্গি যোগাযোগ রয়েছে খতিয়ে দেখতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ধৃত দুই পান্ডা তাহেদুল শেখ ও সাইফুল শেখ বহরমপুরের বাসিন্দা। তাহেদুলের বাড়ি যদুপুরে, সাইফুলের কুতবাপুকুর গ্রামে। বাংলাদেশের নবাবগঞ্জের জাহির হোসেন, মাদারিপুরের নুরুল ইসলাম, মেহেদি হাসান, সাহিল হোসেন ও ঢাকার আবু সালেম মহম্মদ মাসখানেক হল সাইফুলের বাড়িতে ভাড়ায় থাকছিলেন। তাহেদুলই তাঁদের ওই বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল।
এ দিন চুনাখালি এলাকায় ওই পাঁচ যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশ এসে তাঁদের গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করেই তাহেদুল ও সাইফুলের নাম জানতে পারে পুলিশ। তাহেদুলের বাড়িতে হানা দিয়ে পরে কম্পিউটার, প্রচুর পাসপোর্ট, জাল নথিপত্র ও ২১ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
প্রশ্ন হল, যারা এ দেশের নাগরিকই নয়, তাদের নামে পাসপোর্ট বের করা হয় কী ভাবে?
পুলিশের দাবি, জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির চক্রটি চলছে অনেক দিন ধরেই। জেরায় জানা গিয়েছে, বাংলাদেশিরা সীমান্ত পেরিয়ে এ রাজ্যে ঢুকে কুতবাপুকুরে সাইফুলের বাড়িতে উঠতেন। পরে কম্পিউটারে কারসাজি করে তাঁধের জাল রেশন কার্ড ও জাল ভোটার কার্ড বানানো হত। জাল নথি তৈরি হয়ে গেল অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হত। জাল নথিই জমা দিতেন বাংলাদেশিরা। কুতবাপুকুরের ঠিকানা দিতেন। তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট হত।
কিন্তু পাসপোর্ট হাতে পেতে গেলে যে পুলিশি যাচাই প্রয়োজন, সেই পর্ব অনুপ্রবেশকারীরা কী করে উতরোত তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। পুলিশকর্তাদের অনুমান, বহরমপুরের পাসপোর্ট অফিসের কোনও কর্মী এই চক্রে জড়িত থাকতে পারেন। ঠিকানা যাচাই করার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একটি অংশও যোগসাজসে যুক্ত কি না, তারও তদন্ত হবে বলে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন।