সেঞ্চুরি ছাড়াল পেঁয়াজ।
‘নট আউট’ ৮০-৮৫ চলছিল। গত তিনদিন থেকে সেঞ্চুরি হাকিয়েছে পেঁয়াজ। এখন আনাজ বাজারের যে অবস্থা অনেকেরই সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোয় না। শুধুই কি পেঁয়াজ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দামের বহর বেড়ে চলেছে শীতের আনাজেও। জেলা সদর বহরমপুর শহর ও শহর লাগোয়া বাজারগুলিতে রসুন থেকে আদা, ধনেপাতা, ফুলকপি, বাঁধাকপি সব কিছুর বাজারদর আকাশ ছোঁয়া।
রবিবার সকালে বহরমপুরের তারক মল্লিক বাজার সেরে বাড়িতে ঢোকার সময় গজ গজ করে বলছিলেন বাজারে আগুন লেগে গিয়েছে। যা শুনে হেঁশেল থেকে গিন্নি বলছেন, ‘‘সত্যি আগুন লেগেছে, দমকল এলো না তো?’’ তারক বলছেন, ‘‘আর বলো না, বাজারে আনাজের যে দাম তাতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা। চাট্টিখানি কথা! তাই আগুন লাগার কথা বলছি।’’
গত কয়েকদিন থেকে বহরমপুর শহরের বিভিন্ন খুচরো আনাজ বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কিলো দরে। রসুন ২০০ টাকা, আদা ১৫০ টাকা, ধনেপাতা ১০০ টাকা কিলো দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার শেষ করে বহরমপুরের স্বর্ণময়ীর বাসিন্দা রথীন চক্রবর্তী বলছেন ‘‘আনাজের দাম আকাশছোঁয়া। এত দামে কী কিনবো খুঁজে পাচ্ছি না। শীতের মরশুমে আনাজের এত কেন বলতে পারেন।’’ এর পরেই তিনি মজা করে বলেন, ‘‘পেঁয়াজ তো নয় যেন বিরাট কোহলি। ইডেনে গোলাপি বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে বিরাট আর গোলাপি রংয়ের পেঁয়াজও পিছিয়ে নেই। ঝাঁঝ ছড়াচ্ছে বাজার দরে।’’
মাংসের দোকানের ভিড় এড়াতে আগেই মাংস কিনে ফেলেছিলেন উকিলপাড়ার মেঘনা সাহা। তিনি আনাজ বাজারে এসে আদা-রসুনের সঙ্গে পেঁয়াজ কিনতে এসে দরের ঝাঁঝে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ার মতো অবস্থা তাঁর। কিলোপ্রতি ১০০ টাকা পেঁয়াজের দাম শুনে কোনও রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে মেঘনা রাগে গজগজ করে বাজার থেকে বেরোনোর সময়ে বলেন, “পেঁয়াজ কিনতে পারলাম আর কই! দর সেঞ্চুরি হাঁকালে আর কিনব কী ভাবে!’’
বহরমপুরের আনাজ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অসময়ের বৃষ্টির কারণে জেলার একাংশ বানভাসি হয়েছিল। যার ফলে অন্য চাষের পাশাপাশি আনাজ চাষে ক্ষতি হয়েছিল। সেই ধাক্কা সামলে ওঠতে না, উঠতেই বুলবুলের জেরে আনাজ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার জেরে বাজারে আনাজের দাম বেশি। বহরমপুরের বাজারগুলিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। গাজর ৬০-৭০ টাকা, টম্যাটো ৫০টাকা। সেখানে ব্রয়লার মুরগি ১৭০টাকা কিলো।
বহরমপুরের স্বর্ণময়ীর ব্যবসায়ী বাপি কুণ্ডু বলছেন, ‘‘আড়ত থেকে আগে একবস্তা পেঁয়াজ কিনতাম তাতে দিনের শেষে অল্প কিছু বাঁচত। কিন্তু এখন বস্তার পচা পেঁয়াজ বাদ দিয়ে যা পড়ে থাকে তাই দিয়েও দিন দুই চলে যাচ্ছে।’’ বেশি দামে পেঁয়াজ কেনার কারণে বাজারেও দাম বেড়েছে এমনটাই বলছেন ব্যবসায়ীরা। বহরমপুরের পেঁয়াজের আড়ৎদার অজিত ভকতের দাবি, ‘‘আমরাও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনছি। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’’