বন্ধুত্ব ছিলই, তা বোধহয় এ বার রক্তে মিশে গেল! সামাদ আর সঞ্জয়ের সেই নিবিড়তা এখন একটা কিডনির সেতুতে জুড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।
অথচ বছর কয়েক আগেও জিয়াগঞ্জের সঞ্জয় সাহা আর ডোমকলের আব্দুস সামাদের ‘এত বন্ধুত্ব’ কিসের, তা নিয়ে বাঁকা প্রশ্ন কম ওঠেনি। আপাতত তা অতীত। এখন একটা কিডনি আর দু’টো মানুষের সম্পর্কের মাঝে পড়ে আছে একটাই শব্দ, বন্ধুত্ব।
বছর কয়েক আগে, ওড়িশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল সামাদ-সঞ্জয়ের। জেলা এক, গ্রামও কাছাকাছি, মনের মিলমিশও বেশ। বন্ধুত্ব গাঢ় হতে সময় লাগেনি। ওড়িশায় তেমন সুবিধা করতে না পারায় এক সময়ে দু-বন্ধুই চলে আসে কলকাতায়। কাজ না পেয়ে সেখান থেকেও পাততাড়ি গুটিয়ে চেনা সংসারেই অতঃপর ফিরে আসে তারা। দু’বন্ধু মিলে মেলা ঘুরে রোল-চাউমিনের ব্যবসা শুরু করে।
আরও পড়ুন: ঘরে ঠাঁই নেই, কলেজের ছাদে পরীক্ষা দিলেন প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা!
স্ত্রী’কে নিয়ে সঞ্জয়ের ছোট্ট সংসার। সামাদের সেই দু’জনের সংসারে রয়েছে পাঁচ বছরের এক শিশুও। সঞ্জয় বলছেন, ‘‘আরে ভাই, সামাদের কিছু হলে তো ওই শিশুটাও ভেসে যাবে। এ সময়ে ওর পাশে দাঁড়াব না!’’
সে জন্যই তার কিডনির প্রায় নিভু নিভু দশা দেখে নিজেই সটান ছুটে গিয়েছিলেন কলকাতার হাসপাতালে। বলে ছিলেন, ‘‘ও কিডনি আমিই দেব, ভাবতে হবে না রে সামাদ!’’
বছরখানেক ধরে সামাদ অসুস্থ। গ্রাম-ব্লক-জেলার সরকারি হাসপাতালে ঘুরে জানা যায়, করার খুব বেশি কিছু নেই। দু’টি কিডনিই অকেজো হয়ে গিয়েছে সামাদের। বেঁচে থাকার এক মাত্র উপায় কিডনি প্রতিস্থাপন।
স্বাস্থ্য ভাঙতে থাকে। ফুলতে থাকে শরীর। সামাদের পরিবারের কাছে স্পষ্ট হয়ে আসে, করার তেমন কিছু নেই। সামাদের স্ত্রী কিডনি দিতে এগিয়ে এলেও রক্তের গ্রুপ না মেলায় ফের শুরু হয় খোঁজ। কিন্তু নিখরচায় তা মিলবে কোথায়?
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। মাস কয়েক আগে এক সকালে সেখানেই হাজির হয়ে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আচ্ছা সামাদ ভাই আমার রক্তের গ্রুপটা একটি বার মিলিয়ে দেখলে হয় না!’’ রক্ত শুধু নয়, ডাক্তারি পরীক্ষার পরে মিলে য়ায় প্রায় সবটুকুই। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, সরকারি নিয়ম মেনে কিডনি দান করতে চাইলে সঞ্জয় তা দিতে পারেন।
এ বার স্থানীয় বিডিও, বিএমওএইচ এবং জিয়াগঞ্জ থানার ওসিকে নিয়ে তৈরি হয় একটি কমিটি। তাঁরা তদন্ত করে জানান, কোনও আর্থিক লেনদেন ছাড়াই কিডনি দিতে তৈরি সঞ্জয়।
বিডিও সৌমিক মণ্ডল বলেন, ‘‘নিজের জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও সামাদকে একটা কিডনি দিচ্ছে সঞ্জয়। বন্ধুত্বের এর থেকে বড়ো নজির হয় না।’’ এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যভবনে চিঠিও পাঠিয়েছে ওই কমিটি। আর কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালের শয্যা থেকে সামাদ বলছেন, ‘‘সঞ্জয়কে আমার ভাই বলেই জানতাম, এখন দেখছি ও ভগবান!’’