কৃষ্ণনগর পুরসভা। ফাইল চিত্র।
কর্মী নিয়োগের পরীক্ষার উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) উধাওয়ের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না কৃষ্ণনগর পুরসভা কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলের বৈঠক হয়। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, বিষয়টি নিয়ে পুরসভার আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।
কৃষ্ণনগর পুরসভায় নিয়োগের পরীক্ষার প্রায় ২৫ হাজার উত্তরপত্রের (ওএমআর শিট) খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি ওই সব উত্তরপত্র দেখতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) আবেদন করা হয়েছিল। তার জবাবে নদিয়া জেলা সদরের পুরপ্রধান, তৃণমূলের রিতা দাস জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে কোনও ওএমআর শিট নেই। ফলে কোনও তথ্য দিতে তাঁরা অপারগ। বিরোধীদের দাবি, বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগের প্রমাণ লোপাট করতেই এই সমস্ত ওএমআর শিট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কৃষ্ণনগর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন পদে চাকরির পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার থেকে মজদুর পর্যন্ত ১৭টি পদে ৭২ জনকে নিয়োগ করা হয়। সেই সময়েই তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার অন্দরে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
ওই পরীক্ষা যখন নেওয়া হয়েছিল, তখন কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান ছিলেন তৃণমূলের অসীম সাহা। গত পুরভোটে ফের জিতে তিনি চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল সদস্য (জঞ্জাল) হয়েছেন। পুরপ্রধান হয়েছেন এক সময়ে তাঁরই ঘনিষ্ঠ কিন্তু বর্তমানে প্রবল বিরোধী রিতা দাস।সম্প্রতি ওই পরীক্ষার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকারে আইনে চিঠি করা হয়। তারই উত্তর দিতে গিয়ে পুরপ্রধান ওএমআর শিট উধাও হওয়ার কথা জানান। আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। বিরোধীরা আক্রমণ শানাতে শুরু করে। চাপে পড়ে যান পুর কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন ওঠে, কেন বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়নি বা পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি? বোর্ড অফ কাউন্সিলের বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন পুরপ্রধান।
শুক্রবার বৈঠক শুরুর পরেই প্রসঙ্গটি তোলেন এক নির্দল কাউন্সিলর। রিতা দাস গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু বোর্ড অফ কাউন্সিলে আলোচনা বলতে ছিল এটুকুই। পুরসভার এক নির্দল কাউন্সিলের কথায়, “আসলে কেউই বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাতে চাইছে না। কারণ, অনেকেই এর সঙ্গে জডিত। কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হতে পারে।’’ বিরোধী কাউন্সিলরদের অভিযোগ, ‘‘অযোগ্যদের কাছে মোটা বেতনের চাকরি বিক্রি করে প্রমাণ লোপাটের জন্য ওএমআর শিট গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণের তদন্তের প্রয়োজন, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। সেই পথে পুরসভা কতটা হাঁটতে পারবে এ দিনের বোর্ড অফ কাউন্সিলের বৈঠকের পর সেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও পুরপ্রধান রিতা দাস বলেন, “বিষয়টি গুরুতর। বৈঠকে কিছুটা কথা হয়েছে। এ বার আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।”