পাম্পের জলই ভরসা।— ফাইল চিত্র।
পাকা ধান ঘরে তুলতে শেষ পর্যন্ত বিনিময় প্রথায় ফিরতে হয়েছিল চাষিদের। নগদের টানাটানিতে সে ধান বিক্রি করা যায়নি। রয়ে গিয়েছে গোলাতেই। ফের নতুন সঙ্কট হাজির হয়েছে চাষিদের চৌকাঠে।
নোটের চোটে সেচ মিলছে না। ফলে আলু, সর্ষে, কলা চাষে নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে জেলার এক শ্রেণির ‘ব্যবসায়ীরা’ চাষিদের আধা দামে তাঁদের ফসল বিক্রির অঙ্গীকার করিয়ে নিচ্ছে। অলিখিত এই চুক্তি দাদন প্রথাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
খেত থেকে আলু ঘরে উঠলে বাজারের দামের অর্ধেকে তাকে আলু বিক্রি করার শর্তে মহাজনের কাছ থেকে চাষের খরচ আগাম নেন চাষিরা। নোট বাতিলের জেরে আলুচাষিদের মতো এই প্রথায় গম-সর্ষের খেতে এবং কলাবাগানে সেচ নিচ্ছেন চাষিরা। এ ক্ষেত্রে শর্ত সেই একই। অর্ধেক দামে দিতে হবে ফসল।
কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় গমচাষ। সর্ষে চাষে প্রয়োজন দুই থেকে তিন বার সেচ। গমচাষে লাগে মোট চারটে সেচ। সরকারি উদ্যোগের সেচ ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। ব্যক্তি উদ্যোগে মাঠে বসানো স্যালো পাম্প ও সাবমার্সিবল পাম্প থেকে মালিক নিজের জমিতে জলসেচ দেওয়ার পাশাপাশি পাম্প লাগোয়া অন্যদের জমির সেচের জল বিক্রি করেন। তার জন্য জমির পাম্প মালিককে ঘণ্টা পিছু ১০০ টাকা দিতে হয়। এক বিঘা গম চাষ করতে স্বাভাবিক সময়ে জলসেচের খরচ পড়ে দেড় থেকে দু’ হাজার টাকা।
হরিহরপাড়ার গমচাষি আবসার মোল্লা জানান, সার-বীজ কিনতেই টাকা শেষ। নগদ টাকার অভাবে পাম্প মালিকের শর্তেই একরকম বাধ্য হয়েই জলসেচ নিতে হচ্ছে। সেচের বকেয়া টাকা মেটাতে চৈত্র মাসে বাজারদরের থেকে অর্ধক দামে পাম্প মালিকের কাছে গম
বেচতে হবে।
দৌলতাবাদের কলাচাষি ইকবাল হোসেনেরও একই অবস্থা। তিনি জানান, কলাবাগানে সারা বছরই জলসেচ প্রয়োজন। এখন যা অবস্থা তিনি মৌখিক চুক্তিতে বিনা নগদে সেচ নিতে বাধ্য হয়েছেন। শর্ত, পাম্প মালিকের কাছেই বাজারের অর্ধেক দামে বেচতে হবে কলা।
ভগবানগোলার সম্পন্ন চাষি অরুণ মণ্ডলের নিজস্ব পাম্প রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘টাকার সুরাহা কবে হবে ঠিক নেই। ফলে চাষিদের ফসল যাতে মাঠে মারা না যায়, সেই জন্য অর্ধেক দামে ফসল বিক্রির শর্তেই সেচ দেওয়ার প্রথা চালু হয়েছে।’’