হাঁটুজলেই চলছে পাট জাঁক দেওয়া। করিমপুরে।— কল্লোল প্রামাণিক
নিম্নচাপ, টানা বর্ষণ শুধুই নামেই। মধ্য ভাদ্রেও তেহট্ট মহকুমায় খাল-বিল শুকনোই। তার ফলে মহকুমার প্রায় সর্বত্র পাট জাঁক দিতে চরম সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা।
দিন দশেক পরেই কুরবানির ইদ। পুজোর আগে আর বাকি মাত্র এক মাস। পাটই এখানকার অর্থকরি ফসল। ফলে পাট জাঁক দিতে না পারায় আতান্তরে পড়েছেন চাষিরা। মহকুমার নাজিরপুর থেকে শিকারপুর, পলাশিপাড়া কিংবা কাছারিপাড়া সর্বত্র একই চিত্র।
এ দিকে নির্দিষ্ট সময়ের পর পাট গাছ কেটে ফেলতে হয়। তা না হলে পাট গাছে বীজ এসে যায়। ফাইবারও মসৃন হয় না। আবার, পাট গাছ কেটে ফেলে রাখলে তা শুকিয়ে যায়।
পুজোর আগে সমস্যায় পড়েছেন হোগলবেড়িয়ার পাটচাষি অজয় প্রামানিক। তিনি বলেন, এই বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কোথাও পাট জাঁক দেওয়ার জলটুকু নেই। কেউ কেউ জমিতেই গর্ত খুঁড়ে প্লাষ্টিক বিছিয়ে শ্যালো মেসিনের জল জমিয়ে পাট জাঁক দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
যে সব এলাকায় নদী রয়েছে সেখানে এই সমস্যা একটু কম। কিন্তু বেশিরভাগ চাষিদের সেই সুযোগ নেই। অনেক চাষি বাধ্য হয়ে গাড়িতে করে তিন-চার কিমি বা তারও বেশি দূর উজিয়ে পাট নিয়ে যাচ্ছেন জাঁক দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি পড়ছে।
এদিকে পাটের দামও কমে গিয়েছে। যে পাটের দাম মাস দেড়েক আগেও কুইন্টাল পিছু ছিল প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এখন সেই দাম কমে সাড়ে তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে।
পাটচাষি ধরমপুরের সুশীলবাবু জানান, নিজের বিঘা আটেক জমির পাট বিক্রি করেই কোনরকমে সংসার চলে। কিন্তু এখনও যদি ভালো বৃষ্টি না হয়, তবে এবার পুজোর বাজার আর সম্ভব হবে না।
বারবাকপুরের হাসেন আলি মন্ডল জানান, মোটামুটি বৃষ্টি হলেই মাঠের নিচু জমিতে জমা জলে পাট জাঁক দেওয়া যায়। কিন্তু এ বছর সেইটুকু বৃষ্টিও হয়নি। তাই, এবার এক বিঘা জমির পাট জাঁক দিতে জলের জন্য বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা।
করিমপুর ব্লক কৃষি আধিকারিক অমিত কুমার ঘোষ বলেন, বৃষ্টিপাত যথেষ্ট কম হওয়ায় পাট নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন পাটচাষিরা। তেহট্টের মহকুমাশাসক অর্নব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাটচাষের সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।’’