সন্ধের পরে রাস্তায় বেরনোই দায়

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের দেপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রদ্যোত ঘোষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুস্মিত হালদার। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের দেপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রদ্যোত ঘোষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুস্মিত হালদার। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:২২
Share:

সেবাগ্রামের রাস্তায় আলো নেই।—সুদীপ ভট্টাচার্য।

২০১১ সালে আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি হলেও এখনও আমি বিধবা ভাতা পাচ্ছি না। পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসে বারবার বিষয়টি জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি। আমি কি তাহলে ভাতা পাব না?

Advertisement

নিত্যদাসী চক্রবর্তী

উপপ্রধান— আপনার মতো অনেকেই ভাতা পাচ্ছেন না। আসলে এই মুহূর্তে ২৮ নম্বর স্কোর অনুযায়ী বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি ব্লকে আবার টাকা এলে বাকিদেরকেও দেওয়া শুরু হবে। প্রয়োজনে আপনাকে নিয়ে বিডিওর সঙ্গে দেখা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।

Advertisement

আমাদের সেবাগ্রাম দীর্ঘ দিন ধরেই অবহেলিত। গ্রামে বিদ্যুৎ ঢুকলেও রাস্তায় কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। সেই সুযোগে সমাজবিরোধীরা রাস্তায় সহজে ঘুরে বেড়ায়। ছিনতাই করে। সন্ধ্যে সাতটার পরে মহিলারা বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না।

সৌমেন সাহা

রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করার মতো সুযোগ আমাদের নেই। এর জন্য আমরা টাকা পাই না। তবে শুনছি, বিধায়ক ও সাংসদ নাকি অনেক জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করছেন। আমরা তাঁদের কাছে আবেদন করব যাতে তাঁরা সেবাগ্রাম-সহ অন্য গ্রামগুলোতেও আলোর ব্যবস্থা করে দেন।

রাস্তার পাশে বড় বড় ঝোপ-জঙ্গল। বেশ কিছু দুষ্কৃতী সেখানে জুয়া খেলে। মদ খায়। মহিলাদের উত্যক্ত করে। গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে কি এর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ করা সম্ভব?

মিঠুন সরকার

এটা পুরোপুরি পুলিশ ও প্রশাসনের কাজ। তবে বিষয়টি আমরা যখন শুনলাম তখন প্রশাসনের সঙ্গে নিশ্চয় এ ব্যাপারে কথা বলব।

২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাসন প্রকল্পে যাঁরা ঘর পেয়েছেন তাঁদের একশো দিনের প্রকল্প থেকে ৯০ দিনের মজুরি পাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরা এখন পুরো টাকাটা পাননি। কবে পাওয়া যাবে সেই টাকা?

উত্তম হালদার

প্রশাসনের তরকে এই টাকাটা ধাপে ধাপে অ্যাকাউন্টে জমা করে দেওয়া হয়। বাকি টাকাটাও একই ভাবে পেয়ে যাবেন সকলেই।

শিমুলতলার জনঘনত্ব বেশি। কিন্তু রাস্তাঘাটের তেমন উন্নতি হয়নি। অন্য এলাকার মতো এখানে তেমন ভাবে ঢালাই রাস্তাও হতে দেখি না। যে রাস্তাগুলো আছে সেটা সংস্কারও করতে দেখি না। বর্ষা হলেই রাস্তায় জল জমে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে ওঠে। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব কবে?

সুদীপ্ত গুপ্ত

এলাকার উন্নতির জন্য বছরে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা পাই। সেটা কিন্তু যথেষ্ট নয়। আবার বিধায়ক ও সাংসদদের কাছ থেকেও কিছু পাই না। আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে দিয়ে ধাপে ধাপে উন্নতি করছি। আপনাদের এলাকার রাস্তাও সংস্কার করা হবে।

আমাদের গ্রাম হরিশপুর। গ্রামে যে নর্দমা তৈরি হয়েছে সেটা অর্ধেক। আবার যতটা নর্দমা তৈরি হয়েছে সেটাও নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে জল বের হতে পারে না। রাস্তায় জল উপচে পড়ে। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত কী ভাবছে?

পার্থসারথী ঘোষ

বছরে দু’বার গ্রাম সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে বিষয়টি তুলে ধরা উচিত ছিল। তাহলে আমরা সেই মতো পরিকল্পনা করতে পারতম। তবে আপনাদের এলাকার সদস্য যদি আগামী দিনে আমাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন তাহলে আমরা নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।

২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে আমরা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মাত্র তিন সপ্তাহ কাজ পেয়েছি। অথচ অন্য পঞ্চায়েতে এর থেকে বেশি কাজ পাচ্ছে। আমরা কেন পাচ্ছি না? তাছাড়া মজুরির টাকাও ঠিক মতো পাচ্ছি না। আগে ৪০ দিন কাজ করে মাত্র ২৮ দিনের টাকা পেয়েছি। কেন এমনটা হবে?

রেখা রায়

এর আগে মাটি কাটা বা জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজ একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মাধ্যমে করা যেত। এখন এই ধরনের যে সব উৎপাদকমূলক কাজ নয় সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে পুকুর খনন ও জৈব সার তৈরির উপরে জোর দিতে বলা হচ্ছে। আমাদের সেই সুযোগ কম। এটাই প্রধান কারণ। আমরা আগে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার বেশি কাজ করে ফেলেছি। সরকার থেকে এখনও সেই টাকা না পাওয়ায় আপনাদেরকেও দিতে পারছি না।

পুজোর আগে আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদে জঞ্জাল পরিষ্কার করা হয়েছে। তার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পাঁচ জন করে শ্রমিক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সংসদে সেই কাজ হয়নি। কেন জানতে পারি কি?

মিঠু সরকার

পুজোর আগে এলাকার মানুষের আবেদনের ভিত্তিতেই এই কাজটা করা হয়েছিল। যে দিন টাকাটা দেওয়া হয়েছিল সেই দিন ওই এলাকার সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তার এক প্রতিনিধি টাকাটা নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরেও কেন কাজটা হয়নি, সেটা বলতে পারব না। হয়তো কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি আমরা দেখব।

আমাদের উত্তরপাড়ায় রাস্তার কিছুটা অংশ ঢালাই হয়েছে। বাকি অংশটা সেই একই রকম ভাবে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। বিশেষ করে বর্ষার সময় হাঁটার উপযুক্ত থাকে না। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে বার বার বলেও কোনও লাভ হয়নি। এ বার আপনিই বলুন এই অবস্থার পরিবর্তন হবে কবে?

পীযূষ হালদার

আপনার কথা একেবারেই সঠিক। এই রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল। সেই কারণেই আমরা গত বছর একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকার ব্যঙ্ক থেকে যে সুদ পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে রাস্তার এই অংশটা ঢালাই করেছিলাম। বাকিটাও হবে। আসলে সবটাই নির্ভর করছে কত টাকা পাচ্ছি তার উপরে।

এ দিকে, এখনও চালু হয়নি জল প্রকল্পও।

শম্ভুনগরের উপর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা হচ্ছে। কিন্তু তার জন্য বালি, ইট, খোয়া লরি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমাদের গ্রামের প্রধান রাস্তার উপর দিয়ে। দিনের পর দিন ওভারলোডিং লরি যাতাযাত করায় রাস্তা একেবারে বেহাল হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। কে ঠিক করবে এই রাস্তা?

দীপঙ্কর দে

একটা বড় উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। ফলে রাস্তা তৈরির কাঁচামাল তো কোনও না কোনও রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। আমরা ওই রাস্তা তৈরির ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের লিখিত ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, রাস্তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবে।

ডেঙ্গি হওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ার পরে দেখি পঞ্চায়েতকে উদ্যোগী হতে। কেন আগে থেকে উদ্যোগী হয় না। তাহলে তো ডেঙ্গি ছড়াতে পারে না।

দীপঙ্কর দে

আমরা পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে ও একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে আগে থেকেই উদ্যোগী হয়ে এলাকা পরিষ্কার করি। স্থানীয় সদস্যদের মাধ্যমে সেটা করা হয়ে থাকে। এ বার অবশ্য তাড়াতাড়ি বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় সেটা করা সম্ভব হয়নি।

আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে জলের ট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে। পাইপ বসে গিয়েছে। কিন্তু মানুষ জল পাচ্ছেন না। পঞ্চায়েত কেন এই বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে না?

অর্ণব মজুমদার

গোটা বিষয়টিই দেখছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। এর ভিতরে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। তবুও আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করছি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

আগে ইন্দিরা আবাস যোজনার মাধ্যমে বিপিএল তালিকাভূক্ত লোকজন স্কোরের উপর ভিত্তি করে ঘর পেতেন। এখন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ঘর দেওয়া হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে বহু গরিব মানুষ বাদ যাচ্ছেন। যে গ্রামে সাড়ে পাঁচশো মানুষ বাস করেন সেখানে হয়ত পাঁচটি পরিবারের নাম আছে। কেন এমন হচ্ছে?

লোকেশ গুপ্ত

প্রথমত বিপিএল তালিকা বাদ দিয়ে খাদ্য সুরক্ষা তালিকা অনুযায়ী ঘর দেওয়া হচ্ছে। সেই তালিকা তৈরি ও খতিয়ে দেখার দায়িত্ব সরকারি কর্মীদের। সেই কাজটা সঠিক ও নিরপেক্ষ ভাবে না হওয়ার কারণেই অনেক যোগ্য পরিবার ঘর পাচ্ছেন না। এতে পঞ্চায়েতের কোনও হাত নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement