নিত্যানন্দ দাস। নিজস্ব চিত্র
গ্রামে পা দিয়েই শুনতে হয়েছিল, ছেলেবেলায় শান্ত আর লাজুক প্রকৃতির ছিল নিত্যানন্দ। সেই ছেলেটির এমন খুনের খেলায় মেতে ওঠা দেখে গ্রামের পাড়া-পড়শি বিশ্বাসই করতে পারছেন না। তাঁরা বলছেন, ‘‘ছোট থেকেই বেশ শান্ত স্বভাবের ছিল। পড়াশোনাতেও বেশ ভাল। মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিল।’’ শুক্রবার সেই নিত্যানন্দের ওই মামলায় আমৃত্যু যাবজ্জীবনের রায় দিয়েছেন বিচারক।
নিত্যানন্দের ওই চরিত্রের বদলের পিছনে রয়েছে ‘পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘মনোবিজ্ঞানের ভাষায় নিত্যানন্দ ‘অ্যান্টি-সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’, এক ধরনের রোগই বলতে পারেন, তাতেই আক্রান্ত সে। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, এক জন ভাল ছাত্র অথচ তার মধ্যে অপরাধ প্রবণতা প্রবল। অনেক সময়ে বেড়ে ওঠার মধ্যে কোনও ফাঁক থাকলে ওই ধরণের প্রবণতা কাজ করে।’’
এ ছাড়াও বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন, শৈশবে মানসিক ও শারীরিক হেনস্থা হলে, ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের সাহচর্য না পেলে এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
নিহতদের পরিজন। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
উচ্চাকাঙ্খা পূরণে সে জ্যোতিষ চর্চা শুরু করেছিল। আসলে যে কোনও উপায়ে অর্থ ও সম্মান পাওয়া ছিল তার লক্ষ্য এবং সেটা পেতে গিয়েই অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠেছিল। মর্ষকাম স্পৃহা তার মধ্যে কাজ করত এবং অপরাধের মধ্যেও নাটকীয়তা ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
তবে ঠিক সময়ে ওই অসুখের চিকিৎসা করালে নিত্যানন্দ সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু পরিবার যেমন চিকিৎসা করানোর কথা ভাবেননি, নিত্যানন্দও নিজেকে কখনও রোগী বলে মনে করেনি। ফলে একের পর এক ভুল করে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় ভুল হল তার নিজেকে বাঁচাতে একই পরিবারের তিন জনকে খুন করে ফেলা। এই খুনি মানসিকতা তার মধ্যে ছিল। কিন্তু চিকিৎসা করালে সেরে যেত।
নিত্যানন্দ প্রসঙ্গে একই কথা বলছেন তৎকালীন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলছেন, ‘‘আমি দীর্ঘ দিনের কর্মজীবনে খুব কম আসামি দেখেছি, যে এত বুদ্ধিমান। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ছিল তাঁর। বুদ্ধিমান হওয়ার পাশাপাশি ভীষণ ভাল কথা বলত এবং কথার মধ্যে দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারার ক্ষমতাও নিত্যানন্দের ছিল।’’