সবুজ মাঠ। সাইড লাইন বরাবর কালো মাথার ভিড়। গলা ফাটানো চিৎকার। গো...ও...ও...ল।
১৭ জুন থেকে নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার পরিচালনায় এ ভাবেই শুরু হল নবদ্বীপ ফুটবল লিগ। গত মরসুমে লিগ বন্ধ ছিল। এই মরসুমে মাঠে ফুটবল গড়াতেই উচ্ছ্বসিত মঠ-মন্দিরের শহর, নবদ্বীপ। গত মরসুমে বানভাসি নবদ্বীপের অধিকাংশ ফুটবল মাঠ দীর্ঘ সময় জলমগ্ন থাকায় আক্ষরিক অর্থেই বানে ভেসে গিয়েছিল ফুটবল লিগ।
সেই অবস্থায় লিগ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার অধীন বিভিন্ন ক্লাব ও রেফারি অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, জলমগ্ন ওই মাঠ খেলার উপযোগী করে তুলতে যে সময় লাগবে ততদিনে ফুটবল মরসুম শেষ হয়ে ক্রিকেট লিগের সময় এসে পড়বে। অতএব কোনও ভাবেই ২০১৫-১৬ মরসুমের লিগের খেলা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছিল।
নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে প্রথমে আমরা নবদ্বীপের ফুটবল লিগ অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দিয়েছিলাম। আশা ছিল, যদি পরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু তা আর হয় নি। ফলে গত মরসুমে ফুটবল লিগ আয়োজন করা কোনও ভাবেই সম্ভব হয়নি।”
কিন্তু এর কয়েক মাস পরেই নবদ্বীপ মেতে উঠেছিল শহরের নতুন পার্বণ ‘সকার কাপ—সিজন টু’ নিয়ে। রাসের রেশ মিটতে না মিটতেই নবদ্বীপ মেতে উঠেছিল ফুটবল নিয়ে। ময়দানের সকার কাপ উঠে এসেছিল চায়ের দোকান থেকে পাড়ার মোড়ের আড্ডায়। অথচ সেই নবদ্বীপই ফুটবল নিয়ে এক ব্যতিক্রমী ছবি দেখেছিল গত মার্চে দলবদলের সময়। তিপ্পান্নটি রেজিস্ট্রার ক্লাব। প্রায় পাঁচশো খেলোয়াড়। প্রথম, দ্বিতীয়, জুনিয়র, সাব জুনিয়র মিলিয়ে চারটি ডিভিশন। তবু নবদ্বীপের স্থানীয় ফুটবল লিগের দলবদলে একজন খেলোয়াড়ও দলবদল করেননি। কোনও ক্লাবের তরফ থেকে পরের মরসুমের দল তৈরির জন্য কোনও খেলোয়াড়কে নথিভূক্ত করানো হয়নি। নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার ৬৪ বছরের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।
সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল তবে কি লিগ ফুটবল নিয়ে ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছে ক্লাবগুলি? আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল সম্পাদক লাল্টু ভুঁইয়া অবশ্য বলছেন, ‘‘গত বছর বন্যার জন্য নবদ্বীপে ফুটবল লিগই হয়নি। বিভিন্ন ক্লাব টাকাপয়সা খরচ করে যে দল করেছিল, তাদের খেলাতে পারেনি। এ বারে তাঁরা সেই দলই ধরে রাখতে চেয়েছেন। তাই নতুন কোনও খেলোয়াড়কে নথিভূক্ত করায়নি।”
এই অবস্থায় ১৭ জুন থেকে শুরু হয়েছে অনূর্ধ্ব ষোলো সাব জুনিয়র লিগ। খেলছে উদয়ন সঙ্ঘ, মিলন সঙ্ঘ, কর্মমন্দির, কল্যাণ সমিতি এবং চর ব্রহ্মনগর অলিম্পিক ফুটবল অ্যাকাডেমি। সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী জানান, সাব জুনিয়র শেষ হলেই জুলাই মাসের প্রথমেই শুরু হবে জুনিয়র লিগ। এ বারে জুনিয়র ডিভিশনে খেলছে মোট বারোটি ক্লাব। বড়ালঘাট স্পোর্টিং, নির্ভীক সমিতি, অ্যাথলেটিক ক্লাব, আজাদ হিন্দ ক্লাব, নদিয়া ক্লাব, মিলন সঙ্ঘ, কল্যাণ সমিতি, রয়েল ক্লাব, প্রতাপনগর তরুণ সঙ্ঘ, সেবক সমিতি, কর্মমন্দির এবং উদয়ন সঙ্ঘ। এই দুটি লিগ শেষ হলেই প্রথম এবং দ্বিতীয় ডিভিশনের লিগের সূচি চূড়ান্ত করা হবে।