বাদল দাস
ব্যাগে ঠাসা শংসাপত্র। ঠুংঠাং আওয়াজে উপস্থিতি জানান দিচ্ছে খান দশেক মেডেলও। হাতে সেই ব্যাগ ঝুলিয়ে জেলাশাসকের দফতরে হাজির জাতীয় স্তরে সোনা পাওয়া দৌড়বাজ বাদল রায়। যদি একটা চাকরি মেলে। তা হলে সংসরাটা বাঁচে। পেটে কিল মেরে পড়ে থাকার দিন তা হলে ফুরোয়।
খেলার মাঠে একের পর এক মেডেল ছিনিয়ে এনেছে বটে। কিন্তু তাতে ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। ৭৫ শতাংশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ বাদলবাবুকে সংসার চালাতে পরের জমিতে দিনমজুরি করতে হয়। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করে স্ত্রী সুচিত্রা। কিন্তু উপার্জন সামান্য। পেট চলে না তাতে।
নাকাশিপাড়ার হরিনারায়ণপুরের বাসিন্দা বাদলবাবু জানাচ্ছেন, জেলা প্রশাসনের কর্তার কাছে চাকরি বা আর্থিক সাহায্যের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। কিন্তু সাহায্য মেলেনি। ফলে পরের জমিতে কাজ করেই সংসার চালাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ফের জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছি। যদি একটা সুরাহা হয়।’’
বছর দুয়েক আগে বাদলবাবু ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন। বিপিএল তালিকায় নাম থাকায় বাড়িতে বিদ্যুৎ এসেছে। সরকারি সাহায্য বলতে এই টুকুই। কিন্তু তাতে তো আর পেট চলে না।
তিনি বলেন, ‘‘পদক, সার্টিফিকেট দিয়ে তো আর পেট ভরবে না। তাই জনমজুরি খাটি।’’ অভিমানে বছর দুয়েক ধরে কোনও প্রতিযোগিতায় যোগ দিচ্ছেন না তিনি।
বছর তেতাল্লিশের বাদল ছোট থেকে দৌড়ে সাফল্য পেয়ে আসছেন। স্কুলে পড়াকালীন নাকাশিপাড়া ব্লক এলাকায় ১৫০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হন। এর পরে স্থানীয় ম্যারাথন দৌড়গুলিতে যোগ দিয়ে সাফল্য পেতে থাকেন। ২০০৭ সালে জাতীয় স্তরে প্রতিবন্ধীদের জন্য আয়োজিত ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা জেতেন। পরের বছর চেন্নাইতেই ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস অ্যান্ড ট্যালেন্ট মিট ফর দ্য চ্যালে়ঞ্জড’-এ ব্রোঞ্জ পদক পান। ২০০৯-এ জাতীয় প্যারা অলিম্পিকে ৮০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক পান। পরের বছর একই প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পান। ২০১০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮ কিলোমিটার সারা বাংলা রোড রেসে প্রথম হন। স্বামী বিবেকানন্দের স্বার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কন্যাকুমারী থেকে কলকাতা পর্যন্ত ২৬০০ কিলোমিটার মশাল দৌড়ে যোগও দেন তিনি। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘বাদলবাবুর অবস্থা বিবেচনা করে সাহায্য করা যায় কি না দেখছি।’’