স্মৃতিচারণে বুজল গলা

সোমবারের ওই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সাত জন শিক্ষক। তাঁর মধ্যে চার জনই জঙ্গিপুর মহকুমার বিভিন্ন স্কুলে পড়াতেন। স্বভাবতই শোকের ছায়া নেমে এসেছে স্কুলে স্কুলে।

Advertisement

বিমান হাজরা ও সাফিউল্লা ইসলাম

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৩
Share:

সোশ্যাল মি়ডিয়ায় ঘুরছে লেখা। —‘স্যার, শনিবারও আপনি ক্লাস নিয়েছেন। পড়া দিয়েছেন। কোন স্যার নেবেন এখন সে পড়া? ভাষা হারিয়েছি আমরা’। সাগরদিঘির গৌরীপুর হেমাজুদ্দিন হাইস্কুলের শিক্ষক প্রদ্যোতকুমার চৌধুরী। সোমবার খোঁজ মেলেনি। মঙ্গলবার দেহ মেলে। ২০০৯ সালে স্কুলে যোগ দেন বাংলার শিক্ষক প্রদ্যোত। জিয়াগঞ্জের এক মেসে থাকতেন। স্থানীয়দের কাছেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাঁর স্মরণেই ওই পোস্ট।

Advertisement

সোমবার সকালে বালিরঘাটের মর্মান্তিক ওই বাস দুর্ঘটনায় পড়শি দুই জেলায় ছিল শোকের আবহাওয়া। স্কুলে স্কুলে, খেলার মাঠে স্মরণ করা হয় মৃতদের। কোথাও স্কুল খুললেও ক্লাস হয়নি। কোথাও কালো ব্যাচ পরে মাঠে নামলেন খেলোয়াড়েরা। কোথাও মৃতদের ছবি বুকে আঁকড়ে রাস্তায় বেরোলো স্কুল পড়ুয়ারা। সোমবারের ওই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সাত জন শিক্ষক। তাঁর মধ্যে চার জনই জঙ্গিপুর মহকুমার বিভিন্ন স্কুলে পড়াতেন। স্বভাবতই শোকের ছায়া নেমে এসেছে স্কুলে স্কুলে।

সুতির ফতুল্লাপুর হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন সুমন পাল। রঘুনাথগঞ্জ গোডাউন কলোনিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বিয়ের পর বছরও ঘোরেনি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে স্কুলে যোগ দেন নদিয়ার কেচুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা ইংরেজির এই শিক্ষক। তাঁর মৃত্যুতে স্কুলে শোকের পরিবেশ। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় গলা বুজে এসেছে শিক্ষক-ছাত্র সকলেরই। ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় স্কুল।

Advertisement

বাড়িতে সাত ও দুই বছরের দুই সন্তান রেখে স্কুলে ফিরছিলেন সমশেরগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের কর্মশিক্ষার সুফিয়া মমতাজ। তাঁর মৃত্যুর পেয়ে মঙ্গলবার স্কুলে শোকপালন হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়েছে, ‘সুফিয়া ম্যামকে ভোলা যায় না। তাঁর মৃত্যু খুবই কষ্টকর’।

সুতির গোঠা হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা ছিলেন করিমপুরের জয়শ্রী চক্রবর্তী। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে স্কুলে যোগ দেন। প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারি জানান, পাশেই ছাবঘাটি গ্রামে ভাড়া থাকতেন তিনি। শনিবার ক্লাস সেরে করিমপুরে বাড়ি গিয়েছিলেন। সোমবার স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা। ফেরেননি। আশিস বলেন, ‘‘তাঁর সঙ্গে দেখা হল বহরমপুর মর্গে। একজন শিক্ষিকাকে এ ভাবে হারাতে হবে ভাবলে কষ্ট হয়। মঙ্গলবার শোকপালনের পর বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল। বুধবার স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক করিমপুরে তাঁর বাড়িতে যাবেন।”

সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের সপ্তম শ্রেণির চৌহান পৃথ্বীরাজ নন্দী বাবা সৌমিত্র নন্দীর সঙ্গে জলঙ্গি থেকে স্কুলে ফিরছিল সোমবার। বাবা ও ছেলে দু’জনেই মারা গিয়েছে। মঙ্গলবার স্কুলের সামনে সাজানো ছিল মৃত ছাত্রের ছবি।

সুতির কাশিমনগর হাইস্কুলে শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। তা শুরু হওয়ার আগে মৃতদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ দিন প্রশিক্ষণ চললেও বন্ধ ছিল স্কুলের সমস্ত ক্লাস। সুতির সমস্ত প্রাথমিক স্কুলেই এ দিন শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়। ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম গার্লস প্রাথমিকে এ দিন উদ্বোধন করা হয় জলাধার, ডাইনিং হল ও কম্পিউটার। শোকজ্ঞাপনের জন্য স্কুলের সামনে টাঙানো ছিল মৃতদের স্মরণে হোর্ডিং। বন্ধ করে দেওয়া হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement