মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গেলেন মানসিক রোগী। দায় নেওয়া দূরের কথা, গাফিলতি কার, তা নিয়ে একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত বহরমপুরের দুই হাসপাতাল। আর দু’ পক্ষের কাজিয়ায় নাজেহাল হচ্ছেন রোগীর পরিবারের লোকেরা। এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরে হয়রান রোগীর আত্মীয়রা মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সাগর প্রামাণিক নামে এক তরুণ ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর বাড়ি মালদহের মানিকচক থানার পঁচিশা গ্রামে।
কিছু দিন আগে তাঁর চোখের উপরে একটি ক্ষত হয়েছিল। মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাগর বেপাত্তা হয়ে যান। নিয়ম মাফিক মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়। বহরমপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়।
মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানার পর ৯ জুন বহরমপুরে আসনে সাগরের বাড়ির লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজিই হয়নি।
মেডিক্যেল কলেজে গেলে তাঁদের বলা হয়, মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল নজরদারির ব্যবস্থা করার। কারণ, মানসিক অসুস্থদের নজরদারির কোনও ব্যবস্থা তাঁদের নেই। অন্য দিকে, মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জবাব, মেডিক্যাল কলেজের গাফিলতিতেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন ওই যুবক।
সাগরের বাবা প্রাক্তন সেনাকর্মী দুলাল প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমরা এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছি। কেউ আমাদের কিছু জানাচ্ছে না।’’
সাগরের চোখে ক্ষত হল কী করে? সুপারের দায়সারা উত্তর, ‘‘পাগলরা নিজেদের মধ্যে সর্বক্ষণ মারপিট করতেই থাকে।’’ দুলালবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিতে গেলে পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করে। কারণ জানতে চাইলে গলা ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করার হুমকি দেয়।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা বিভাগীয় তদন্তও করছি।’’ সাগরের পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ স্বীকার করেননি কেউ। বহরমপুর থানার আইসি শৈলেনকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘নিখোঁজের খোঁজ যেভাবে চালানো হয়, সেভাবেই চলছে।’’
মঙ্গলবার ওই পরিবারের তিন জনকে মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়াতে দেখে আইনজীবী সোমা স্বর্ণকার তাঁদের পুলিশ সুপারের দফতরে নিয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সোমাদেবী জানিয়েছেন, সাগরের পরিবার আদালতের স্বারস্থ হওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে।