আমাদের আবার নিরাপত্তা! মুন্ত্রী (আনিসুর) এমপি’রা মার খাচ্ছেন আর আমরা তো কোন ছার। দু’বেলা এসে পিস্তল দেখিয়ে মারব-ধরব বলে যাচ্ছে ওরা (তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা)। বলছে ভোট দিতে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। গেলেই স্বামীর মত হাল হবে। স্বামীর খুনের প্রতিবাদটা যে ভোটের বোতাম টিপে করব, সেই ক্ষমতাও নেই। বছর পার হয়ে গেল, আসামী এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। তার লোকেরা এসে পিস্তল দেখিয়ে যাচ্ছে, তার পরেও পুলিশ ওদের সঙ্গেই ওঠা বসা করছে।
আমরা থানায় কিছু বলতে গেলে পুলিশ ওদের জানিয়ে দেয়। তারপর ফের শুরু হয় জুলুম। ওদের ভয়ে ছেলেটাকে মুম্বই পাঠিয়ে দিয়েছি। কাজ করার অভ্যেস না থাকায় ওখানেও খুব কষ্টে আছে। আর ছোট মেয়েটাকে গত কাল আমার মামার বাড়ি পাইকমারি পাঠিয়ে দিলাম। যে ভাবে অস্ত্র দেখাচ্ছে, যদি মেরে দেয়!
স্বামী নেই, মেয়েদের নিয়ে একা বাড়িতে কোনওরকমে আছি। গোটা রাত ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি। কেস তুলে না নিলে ওরা আমাদের সকলকে খুন করে দেবে বলছে। রাতে চারপাশে তালা ঝুলিয়ে আতঙ্কে বাড়ির ছাদে বসে থাকি। ভোর বেলা চোখ টানে, একটু ঘুম হয়। আর সকাল থেকে আবারও সেই আতঙ্ক।
ক’দিন থেকে বিধানসভা ভোটের দিনের সকালটা যেন আরও চেপে ধরছে আমাকে। চোখের সামনে স্বামী বোমা গুলি খেয়ে পড়ে আছে। আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছে। বোমার ধোয়া তখন আকাশের দিকে, একটু সাহায্য করব তার উপায় ছিল না। কিচ্ছু করতে পারলাম না। আর আমাকে হাত কয়েক দুরে এক জন চেপে ধরে বলছে তুই গেলেও ওরা মেরে ফলবে। আর যেতে পারিনি ওঁর কাছে। ওই সময়টা সব সময় চোখের সামনে ভাসে। এখনও রাতে শুয়ে ছটফট করি।
আরও পড়ুন:আসাদুল খুনে প্রশ্ন পুলিশের, হঠাৎ কোথায় উধাও ক্যামেরা
ভোট যত এগিয়ে আসছে আতঙ্কটা ততই চেপে বসছে। এক দিকে চোখ বুজলে সেই সকালের ছবিটা আর অন্য দিকে চোখটা খুললেই সামনে হাজির হচ্ছে চেনা কয়েকটা মুখ। পিস্তলটা নাচাতে নাচাতে আসছে আর বলছে কোনও দরকার নেই, বুথ মুখো হলেই আবার ছবি করে দেব। খোলা গলায় বলছে, ‘পুলিশ, কোর্ট, টিভির লোক— কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। সব আমাদের কেনা আছে।’
ওদের টাকা আছে, আইন পুলিশ সব পকেটে। সেই জন্য আর কোথাও কোনও অভিযোগ নিয়ে যাব না ভেবেছি। ছেলে মেয়েরা বাড়ির বাইরে। আমি স্বামীর ভিটেটা অঁকড়ে পড়ে আছি, ওরা কবে আমাকে স্বামীর পাশে কবরে পাঠাবে তার অপেক্ষায় বসে আছি। আল্লাহ ছাড়া আর আমাদের কেউ নেই, তার কাছেই বিচার চেয়েছি, শেষ বিচার!
গত বিধানসভা নির্বাচনের সকালে বোমার ঘায়ে মৃত সিপিএম কর্মী তহিদুল ইসলামের স্ত্রী