বিজেপি দফতরে মানবেন্দ্রনাথ রায় ও জগন্নাথ সরকার। ফাইল চিত্র
যিনি সভাপতি ছিলেন, তিনি সাংসদ হয়েছেন। সেই জগন্নাথ সরকারকে সরিয়ে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করা হল সাংসদ হতে চেয়েও হতে না-পারা মানবেন্দ্রনাথ রায়কে।
বছর তিনেক আগে নদিয়ায় বিজেপির সংগঠন ভেঙে দু’ভাগ হয়। সেই থেকেই দক্ষিণ ভাগের দায়িত্বে ছিলেন জগন্নাথ। প্রথম বারের জন্য সভাপতি বদল হল এখানে। সম্প্রতি লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন জগন্নাথ। তার পরে এই বদল। রবিবার জগন্নাথ বলেন, “সাংসদ হওয়ার ইস্তক আমি দলের কাজে বেশি সময় দিতে পারছি না। দল সব কিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন সভাপতির পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাব। “
২০০৫ সাল থেকে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞানের অধ্যাপক মানবেন্দ্রনাথ রায়। দলের জেলার সম্পাদক ছিলেন। এক সময়ে রাজ্যস্তরে দলের শিক্ষা সেলের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। বছর তিনেক আগে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৫ সালে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেছিল। জিততে না পারলেও সেই নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। পরে জগন্নাথের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর।
বিজেপি সূত্রের খবর, কৃষ্ণগঞ্জের উপ-নির্বাচনের সময়ে দলে জগন্নাথ-বিরোধী বলে পরিচিত, সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু ভৌমিকের সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল মানবেন্দ্রনাথের। জগন্নাথের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পরেই, কয়েক মাস আগে নতুন জেলা কমিটিতে তাঁর ডানা ছাঁটা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে জেলার সহ-সভাপতি করা হয় তাঁকে। এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপির মনোনীত প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী যখন শেষ পর্যন্ত আইনি বাধায় দাঁড়াতে পারলেন না, জগন্নাথ সরকারের পাশাপাশি তিনিও মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। ‘দলের নির্দেশে’ই মনোনয়ন দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করলেও দল তাঁকে প্রতীক দেয়নি, দিয়েছিল জগন্নাথকে। আর সেই সুবাদেই এখন তিনি সাংসদ।
জগন্নাথ সাংসদ হওয়ার পর থেকে দলে ক্রমশ দাপট বাড়ছিল তাঁর শিবিরের। দিব্যেন্দু-সহ অন্যেরা আরও কোণঠাসা হচ্ছিলেন। এ বার এই রদবদলের পরে দলের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যেও বদল আসবে বলে মনে করছেন দলের একটি অংশ। মানবেন্দ্র অবশ্য বলেন, “আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল যা দায়িত্ব দেবে, পালন করব। সকলকে নিয়েই কাজ করব।’’ আর দিব্যেন্দু বলছেন, “মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মত দক্ষ এবং যোগ্য লোকের হাতে দল দায়িত্ব দিয়েছে। আমি আশাবাদী, তাঁর নেতৃত্বে এই জেলায় দল এগিয়ে যাবে। “
তবে কতটা এগোবে আর জগন্নাথ শিবির কতটা তাঁর পা টেনে ধরবে, সেই প্রশ্ন থাকছেই।