রোষানল: দুর্ঘটনার পরে ডাম্পারে আগুন লাগাল জনতা। শনিবার কান্দির মাধুনিয়াতে। ছবি: কৌশিক সাহা
বালি বোঝাই ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুরেশ দাস (৪৮)। তাঁর বাড়ি কান্দির মাধুনিয়া গ্রামে। শনিবার দুপুরে কান্দি-সালার রাজ্য সড়কে কান্দির দোহালিয়া বাইপাস সংলগ্ন মাধুনিয়া মোড়ের ঘটনা। উত্তেজিত জনতা ওই ডাম্পারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে দমকল ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পেশায় লটারির টিকিট বিক্রেতা সুরেশ এ দিন দুপুরে বাইপাস মোড় থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন দুপুরের খাবার খেতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাস্তার একেবারে বাঁ দিক ঘেঁষে সাইকেল হাঁটিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন সুরেশ। সেই সময় পিছন থেকে বালি বোঝাই একটি ডাম্পার তাঁকে ধাক্কা মারে। তিনি পড়ে গেলে তাঁর উপর দিয়েই ডাম্পারটি চলে যায়।
গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ‘রেফার’ করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগে মাঝ রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর দেহ কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন।
মাধুনিয়া মোড়ের পথ দুর্ঘটনার খবর দাবানলের ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। কয়েকশো উত্তেজিত জনতা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘাতক ডাম্পারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দমকল বাহিনি আসে। অভিযোগ, উত্তেজিত জনতা প্রথমে পুলিশ ও দমকলকে ওই ডাম্পারের কাছে পৌঁছতে দেয়নি। আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশ ও দমকল বাহিনীর দিকে তেড়ে যায়।
পুলিশ পিছিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে কান্দির এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার ও কান্দির আইসি সুনয়ন বসু যান। তাদেরও কোনও কথা শুনতে চায়নি উত্তেজিত জনতা। দুপুর তিনটে থেকে পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে ডাম্পারটি পুড়তে থাকে। পরে জনতাকে বুঝিয়ে আগুন নেভানোর কাজে হাত দেয় দমকল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দোহালিয়া মোড় থেকে খড়সা মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে গত কয়েক বছরে দুর্ঘটনায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ তবুও ওই রাস্তার উপর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রন করা বা এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে চিহ্নিতও করেনি বলেই অভিযোগ। যশোহরি-আনোখা ২নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিধান পাল বলেন, “পথ দুর্ঘটনা ওই এলাকায় মাঝেমধ্যেই হয়। বেশ কয়েক জন মারাও গিয়েছেন। বাসিন্দারা আন্দোলন করে রাস্তার উপর স্পিড ব্রেকার বসিয়েছেন। তার পরেও দুর্ঘটনা কমেনি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুর্ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটে। এর আগেও যান নিয়ন্ত্রণের জন্য বহু আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এ বার প্রথম কোনও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল। এটা দীর্ঘ দিন ধরে জমতে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ওই রাস্তার বিষয়টি এ বার গুরুত্ব দিয়েই দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে পুলিশ।