বহরমপুর স্টেশনে নামলেন মমতা। —নিজস্ব চিত্র
তাঁর ‘মুর্শিদাবাদ বিজয়’ প্রায় সম্পূর্ণ। বহু দিন বাদে প্রশাসনিক বৈঠক ও জনসভা করতে বহরমপুরে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভাগীরথী এক্সপ্রেস ধরে সোমবার রাতেই জেলায় চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা। তার পরে বহরমপুর স্টেডিয়ামে হবে জনসভা। অধীর চৌধুরীর ভেঙে পড়া গড়ে দাঁড়িয়ে মমতা কী বলেন, সে দিকে চেয়ে সকলেই। বিশেষ করে কংগ্রেস ছেড়ে যাঁরা সদ্য তৃণমূলে পা দিয়েছেন, সেই নেতারা। রাতে মুখ্যমন্ত্রী যখন ট্রেন থেকে নামছেন, ভিড় করতে দেখা গেল তাঁদেরই।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ এবং জেলার সাতটি পুরসভার মধ্যে ছ’টি ইতিমধ্যে দখল করেছে তৃণমূল। গত শনিবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে সেই ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, বেলডাঙা ও বহরমপুরের পুরপ্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম। উন্নয়নে গতি আনতে অর্থ বরাদ্দের আবেদন জানান পুরপ্রধানেরা। ফিরহাদ বলেন, ‘‘রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কথা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। সব অর্থ এক সঙ্গে দেওয়া সম্ভব হবে না। অল্প অল্প করে মেটানো হবে।’’
যদিও যে জলকর থেকে পুরসভার আয় হয়, তা নেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে বলে বহরমপুর, জঙ্গিপুর ও বেলডাঙার পুরপ্রধানদের ওই বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধানেরা জানান, এর ফলে তাঁদের লোকসান হবে। তা যে কোনও ভাবে হোক পুষিয়ে দেওয়া হবে বলে নেতামন্ত্রীরা জানান। রাস্তা ও নর্দমা সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের ‘আনটায়েড ফান্ড’ যাতে বন্ধ না হয়, তা দেখার জন্য সব পুরপ্রধান আর্জি জানান। বহরমপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ পুরসভা নিয়ে উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার প্রস্তাবও ওঠে। বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য অবশ্য তার বিরোধিতা করে ওই তিনটি পুরসভা নিয়ে কর্পোরেশন করার প্রস্তাব দেন। বেলডাঙার পুরপ্রধান পানীয় জলের সমস্যা মেটানো এবং স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে প্রসূতিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন।
বেশির ভাগ আবেদনের ক্ষেত্রেই অবশ্য স্পষ্ট আশ্বাস মেলেনি। বরং ঘুরে-ফিরে এসেছে অর্থাভাবের কথা। এখন মুখ্যমন্ত্রী নিজে কী বলেন, তা শুনতে চাইছেন নেতারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সভা থেকে জেলার নানা উন্নয়নমূলক কাজের ঘোষণা করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। মঞ্চ থেকেই তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন এবং নানা এলাকা থেকে আসা পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেবেন ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল। কিন্তু জেলা জুড়েই বাসযাত্রীদের যে ভোগান্তি হতে চলেছে, সন্দেহ নেই। উপভোক্তাদের বহরমপুর স্টেডিয়ামে নিয়ে আসার জন্য প্রশাসন ১১৩০টি বাস নিয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৪টি এই জেলারই। এ ছাড়া মালদহের ১৩৩টি, বীরভূমের ১০৩টি এবং নদিয়া থেকে ৩৪০টি বাস ভাড়া করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। যার প্রভাব পড়বে পাশের জেলাগুলিতেও।
যান চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ জারি করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) বিকাশচন্দ্র ভাণ্ডারী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা যাওয়ার বাস মোরগ্রাম মোড় থেকে বীরভূমের পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।’’ ছোট গাড়ি নবগ্রাম থানার শিবপুর টোল প্লাজায় আটকে দেওয়া হবে। বহরমপুর শহরে বড় গাড়ি ঢুকবে না।