বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। ছবি সৌমিত্র সিকদার।
দেড় বছরের বেশি আগে তাতলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং চাকদহ পুরসভার যৌথ উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এলাকার মানুষের চাপে আজও পুরসভা সেখানে আবর্জনা ফেলতে পারেনি। সোমবার নবান্নে পুরসভাগুলিকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা সভায় হাজির ছিলেন চাকদহের পুরপ্রধান অমলেন্দু দাস। সেই সভায় আরও কিছু রাজ্যের আরও কিছু শহরের সঙ্গে চাকদহের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প দ্রুত চালু করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরে অমলেন্দু বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের জানিয়েছি। তাঁরা এর আগে পরিদর্শন করে গিয়েছেন। আজ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেন, জমি থাকা সত্ত্বেও কেন এই প্রকল্প হবে না? এই ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য তিনি আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন।”
বাম আমলের শেষ দিকে চাকদহ ব্লকের তাতলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকালয় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা হয়েছিল। তৃণমূল পঞ্চায়েত দখল করার পর সেখানে আরও জমি কেনে। সব মিলিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব জমির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে তিন বিঘার উপর। সেখানে আবর্জনা ফেলার কাজ চলতে থাকে। আর্থিক কারণে পঞ্চায়েত পক্ষে আবর্জনার পৃথগীকরণ সম্ভব নয়।
সেই সময় চাকদহ পুরসভাও আবর্জনা ফেলার জমি খুঁজছিল। উভয়ের প্রয়োজন মেটাতে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পুরসভার চুক্তি হয় যে, ওই জমিতে উভয়েই আবর্জনা ফেলবে। সেগুলির পৃথগীকরণ করবে পুরসভা। তারা নিজেরাও সেখানে সাড়ে তিন বিঘার মতো জমি কেনে। ছাউনি এবং প্রধান সড়ক থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য তিনশো মিটার রাস্তা তৈরি করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালে প্রকল্পের উদ্বোধনের দিনেই এলাকার বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন। তার জেরে দেড় কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন চাকদহের তৎকালীন বিডিও অতনু ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন পুরপ্রতিনিধিরা।
তার পর থেকে কাজ আর এগোয়নি। তবে সদ্য লোকসভা নির্বাচনে এই এলাকায় বিজেপির কাছে ধাক্কা খেয়ে তৃণমূল প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। এই ভোটে শহরের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে ২১টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতেই বিজেপির তুলনায় তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। ২১টি ওয়ার্ডের ৮৮টি বুথের মধ্যে মাত্র তিনটিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। মানুষের ক্ষোভ নিরসন না হলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যে বিপদ হতে পারে, তৃণমূল নেত্রী মমতা তা ভাল করেই জানেন। সেই কারণে ২০২৬ সালের মধ্যে তিনি যাবতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপক প্রকল্পের কাজ সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে সন্ধ্যায় কল্যাণী মহকুমাশাসক অভিজিৎ সামন্ত বলেন, “এই প্রকল্প তৈরি নিয়ে তেমন কোনও নির্দেশিকা নেই। একটা জমি আছে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই ব্যাপারে পুরসভা এবং গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।”